Thursday, May 14, 2009

যুক্তির ফ্যালাসি, কুযুক্তি বা নষ্টামিসমূহ by দুরের পাখি

ব্লগে অনেকদিন অবস্থানের ফলে অনেক রকমের চিন্তা-চেতনার মানুষের লেখা দেখলাম । কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেখলাম যুক্তি নিয়ে কথা বলে গলা ফাটিয়ে শেষে দেখাগেলো এমন এক যুক্তি নিয়ে আসলেন যেটা নষ্টামি ছাড়া আর কিছু নয় । কিন্তু একই রকমের অন্য কিছু ব্লগারের সমর্থন পেয়ে ভাবতে থাকেন যে বিশাল একটা যৌক্তিক লড়াই জিতে গেছেন।

যুক্তির ফাঁক-ফোকরগুলা সম্পর্কে অনেক সময়ই দেখা যায় , যুক্তিদাতা নিজেই সচেতন নন । যেটা পরে তাকে ব্যাখ্যা করলে বুঝতে পারেন কি ভুল ছিল, সেটা কেউ ব্যাখ্যা করে না বলে এড়িয়ে যান, এবং পরবর্তীতে কেউ সেটা চোখে কুড়াল মেরে দেখিয়ে দিলেই টের পান । কিন্তু আগে যে একই রকম ভুল যুক্তি দিয়ে এসেছেন, সেটার কথা কজনেরই বা মনে থাকে ।

পাঠক-সমর্থক যারা তাদের কথা তো বলাই বাহুল্য । সাধারণত আমরা অন্যের মুখে যা শুনতে চাই তা শুনতে পাবার পরে সেটার যৌক্তিক বৈধতা নিয়ে আর ভাবি না । ভাবার পরে হয়ত দেখা যায়, সেটা ভুল ছিল । কিন্তু খুব কম লোকেরই সে পরিমান ডিসেন্সি থাকে নিজের মতামতের পক্ষে দেয়া যুক্তি যে ভুল যুক্তি সেটা বলার । আমি নিজেও অনেকসময়, এই দোষে দুষ্ট ।

যাই হোক, কয়েকটি পর্বে আমি চেষ্টা করব সাধারণ যৌক্তিক নষ্টামি ভা ভুল যুক্তিগুলা নিয়ে আলোচনা করার ।

১ : স্ট্র ম্যান ফ্যালাসি (কুশপুত্তলিকা নষ্টামি) :

এটি হচ্ছে প্রতিপক্ষের অবস্থান কে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করে, সে বিকৃত অবস্থানের বিপক্ষে যুক্তি দেখিয়ে, প্রতিপক্ষের আসল অবস্থানের বিপক্ষে যুক্তি দেখানো হয়েছে বলে আত্নপ্রসাদ লাভ করা ।

উদাহরন : নাস্তিকরা ঈশ্বরকে বিশ্বাস করে ঠিকই কিন্তু মদ খাবার জন্য, অবৈধ যোন সম্পর্কে চালিয়ে যাবার জন্য ধর্মের আচার মানতে চায় না ।

এটি একটি ভুল যুক্তি ।এটি বেশ উপভোগ্য হয়, কারন ঈশ্বরে বিশ্বাস করেও কেউ যদি খারাপ কাজ করার জন্য কেবল একটি সত্যকে অস্বীকার করে, তাকে হিপোক্রেট বলে বেশ দু'কথা শুনিয়ে দেয়া যায় ।

কিন্তু তারপরও এটি একটি কুযুক্তি, কারন আলোচ্য নাস্তিক যে ইশ্বরে বিশ্বাস করে, এটি একটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ধারনা । যেটা কেবল তার অবস্থানকে বিকৃত করার জন্য উপস্থাপন করা ।

কিন্তু কোনো নাস্তিক যদি তার এই অবস্থান স্বীকার করে নেয়, তাহলে ভিন্ন কথা ।

২ : এড হোমিনেম (গালিবাজি করে যুক্তি প্রতিষ্ঠা )

এটি খুবই কমন একটি কুযুক্তি, মোটামুটি সবাই কমবেশী ব্যাবহার করে । প্রায় সব মতের লোকই । প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে ব্যাক্তিগত বিষোদগার করে, অর্থাৎ গালিবাজি করে , পরে তাকে পরাজিত করা হয়েছে ভাব দেখানোটাই হল এড হোমিনেম ।

উদাহরন : কোন জামাতি এসে বল্ল, মূর্তি বানানো তো নিষেধ করা আছে এছলামে তাহলে মূর্তি ভাঙার বিরুদ্ধে কথা বলা কেন । সে যেহেতু ব্লগে পরিচিত জামাতি তখন সাধারনভাবে সবাই হইহই করে তাকে বেশ কিছু গালাগালি করে তাড়িয়ে দেবে । কিন্তু এটা তার আলোচ্য বিষয়টাকে মোটেও স্পর্শ করে না । অর্থাৎ তার যুক্তি তখনো ভ্যালিড ।

আবার কোনো পরিচিত তাবলীগি এসে রাজনীতি বিষয়ে তার ধারনা দিলে, তখন নাস্তিকরাও এই এড হোমিনেম ব্যাবহার করে থাকে ।

এড হোমিনেম নিয়ে একটু প্যাঁচ আছে একটা জায়গায় । সেটা হল একটা ভ্যালিড যুক্তির সাথে কিছু গালি যোগ করা হলে, সেটা খারাপ হতে পারে কিন্তু তা কখনো যুক্তিটাকে ইনভ্যালিড করে না ।

যেমন কোনো জামাতি যদি একাত্তরে নিজামীর ভূমিকা নিয়ে কুযুক্তি দেখাতে গেলে, তাকে একাত্তরে পত্রিকা থেকে নিজামীর নষ্টামির প্রমান দেখানোর সাথে সাথে এক-ট্রাক গালি দেয়া হলেও , নিজামীর নষ্টামির যুক্তি ঠিকই থাকবে । সেটা গালির কারনে বাতিল হয়ে যাবে না ।

৩ : টু কুওকুই (তুইও তো )

রফিক আর শফিকের মধ্যে কথা হচ্ছে ।
রফিক : তুই চুরি করিস, তুই একটা খারাপ লোক ।
শফিক : তুইওতো করিস ।
রফিক : (আমতা আমত করে) হ, চুরি করা আসলে তেমন খারাপ না ।

আলোচ্য দোষটি প্রতিপক্ষের মধ্যে থাকলেই, কাজটি বৈধ হয়ে যাবে না । প্রতিপক্ষের আঙুল তোলার বিরুদ্ধে বলা যেতে পারে । কিন্তু কাজটির বৈধতা অবৈধতার সাথে এর কোনো সম্পর্ক নাই ।

এছলামে, নারীর অবস্থান নিয়ে কথা বলার সময়, প্রায়ই তার কেরেস্তান, হিন্দু, ইহুদি বিভিন্ন ধর্মে নারীর অবস্থা যে আরো শোচনীয় সেটার ফিরিস্তি দেয়া শুরু করে ।

অন্য ধর্মে নারীকে কিভাবে ট্রিট করা হচ্ছে, সেটা কোনোভাবেই এছলামের অবস্থানকে ভ্যালিড করে না । এটি একটি ধ্রুপদী টু কুওকুই কুযুক্তি ।

৪ : সার্কুলার লজিক (কুযুক্তির দুষ্টচক্র)

সাইফুল যে ভুতের গল্পটা কইছে, আমার মনে হয় সত্য কথাই কইতাছে । কারন ওরে আমি অনেকবার কসম কাইটা কইতে কইছি, তখনো সে একই কথা কইল ।

যে প্রস্তাবনা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে, তার ধর্ম বা সেটা কি বলে, প্রস্তাবনার যৌক্তিকতার সাথে তার কোনো সম্পর্ক নাই । কোরানে কোনো ভুল নাই, কারন কোরানে স্বয়ং আল্লাহ-পাক বলেছেন যে এটা কোনো ভুল থাকতে পারে না ।

এখানে যে বইয়ের বৈধতা নিয়ে আলোচনা । সে বইয়ে তার নিজের বৈধতা নিয়ে কোনো কিছু থেকে থাকলেও তা তার বৈধতার প্রমানে ব্যাবহার করা যাবে না । কারন বইয়ের ভিতরে কি লেখা আছে সেটা যে সত্য সেটা এখনো প্রমান হয় নাই ।

কিন্তু তার বৈধতা ছাড়া অন্য বিষয়ে সে কি লিখেছে সেটা তৃতীর ব্যাবস্থার মাধ্যমে চেক করা যেতে পারে ।

কোরানের উৎস, তার বৈধতা নিয়ে, কোরান নিজে কি বলেছে সেটার কোনো মূল্য নেই । চোরকে জিজ্ঞেস করা তুই কি চুরি করেছিস, এর মত ।

৫ : বার্ডেন অফ প্রুফ (প্রমানের বোঝা)

এটি বহুল প্রচলিত একটি ধ্রুপদি কুযুক্তি । ঈশ্বরযে নাই সেটা প্রমান করে দেখানোর আগ পর্যন্ত ঈশ্বর আছে সেটা মানতে হবে ।

এটি কুযুক্তি । কারন , প্রশ্নকর্তার প্রশ্নই পুরোপুরি বোধগম্য নয় । তার প্রশ্ন পুরোপুরি বোধগম্য করতে হলে, প্রশ্নের প্রতিটি শব্দের ব্যাখ্যা ঠিকমত দিতে হবে তাকে ।

--ঈশ্বর যে নাই সেটা প্রমান কর
-ঈশ্বর কে/কি?
--এই দুনিয়ার সৃষ্টিকর্তা, পালনকর্তা ........
-কোথায় থাকেন, কি করেন ?

সেটাই তো প্রমান করা হচ্ছে ।

এইখানেই ফ্যালাসিটি বিবস্ত্র হয়ে পড়ে ।

৬: রেড হেরিং (আজাইরা প্যাচাল)

আলোচ্য বিষয়ের সাথে সম্পর্কবিহীন একটি ইস্যু তুলে, মূল আলোচনাকে অন্যদিকে ডেভিয়েট করে, সে আলোচনার জিতে, আলোচ্য বিষয়ের উপর আলোচনায় জেতা হয়েছে বলে ভাব-দেখানো ।

ঈশ্বরের অস্তিত্ত নিয়ে প্রমানভিত্তিক আলোচনায়, কমিউনিজমের ব্যার্থতা, এবং রাশিয়া যে একটি নাস্তিক দেশ হয়েও প্রচুর লোক হত্যা করেছে এইসব বিষয় নিয়ে এসে, বড়সড় লেকচার দেয়া ।

অথবা এছলামের অসহনশীলতা সংক্রান্ত কোরান হাদিসভিত্তিক আলোচনায় ইরাকে বুশ কি করেছে, আফগানিস্তানে বুশ কি করেছে এইসব ইস্যু তুলে, মোছলেমরাই যে বেশী সাফার করছে সেটা গলা চড়িয়ে তুলে ধরা । মোছলেমরা সাফার করছে, এটা অস্বীকার না করলেও, তার সাথে কোরান-হাদিস ভিত্তিক এছলামিক অসহনশীলতার কোনো সম্পর্ক নাই ।

অনেক ক্ষেত্রে অবশ্য কোনটা রেড হেরিং আর কোনটা রেড হেরিং নয়, সেটা নিয়ে একটু গোলমাল লাগতে পারে । যেমন, তুই মিথ্যা বলছিস এটা নিয়ে আলোচনায়, তুই সেদিন চুরি করে ধরা খাইছিস এর ব্যাপারটা পুরোপুরি রেড হেরিং নয় । যদি যে চুরি করে তার মিথ্যা বলার সম্ভাবনা বেশী হয় ।

৭: ফলস ডিলেম্মা (মিথ্যা দ্বন্দ )

প্রস্তাবনার বৈধতার জন্য, এমন দুটি অপশন ঠিক করে দেয়া, যারা একে অপরের বিপরীত নয়, বা তারাই একমাত্র অপশন নয়, তাদের ছাড়া অন্য অপশনও আছে ।

জামাতিরা সাধারনত নির্বাচনী প্রচারনায় এ কুযুক্তিটি ব্যাবহার করে । আপনি যদি এছলামের পক্ষে হন তাইলে আমাদের ভোট দিবেন । আর যদি বেলেল্লাপনা, মাদকাসক্তি, অর্থনৈতিক দুরাবস্থা এইসবের পক্ষে হন তাইলে অন্যদের ভোট দিবেন । জামতিদের ভোট দিলেই এগুলা দূর হবে, বা অন্যদের যে কাউকে ভোট দিলে এগুলা শুরু হবে তার কোনো ভিত্তি নাই ।

অথবা । ঈশ্বর আছে অথবা নাই, তার মানে আল্লাহ আছে অথবা নাই । ফিফটি-ফিফটি সম্ভাবনা । এটি একটি ফলস ডিলেম্মা কুযুক্তি, এবং প্যাসকেলের ওয়েজারের ভিত্তি ।

ঈশ্বর থাকলেই যে সেটা আল্লাহই হবে, বা কেবল একজনই হবে সেটার স্বপক্ষে কোনো যুক্তি বা প্রমান নাই । ঈশ্বর থাকলে অনেক রকমের হৈতে পারে , সেইক্ষেত্রে যেহেতু কোনটার স্বপক্ষেই নিশ্চিত প্রমাণ নাই, অতএব সবগুলার সম্ভাবনা সমার ধরতে হবে , ফলশ্রুতিতে একটা নির্দিষ্ট ঈশ্বরের জন্য সম্ভাব্যতার মান খুব ছোট হবে । ফিফটি-ফিফটি কোনমতেই নয় ।

৮ : প্যাসকেলের ওয়েজার (প্যাসকেলের বাজি)

এটি মূলত ফলস ডিলেম্মা বা মিথ্যা দ্বন্দ গুরুপের একটি কুযুক্তি । কিন্তু এর মাত্রাতিরিক্ত ব্যাবহারের কারনে একটি সম্পূর্ণ পোস্ট । হালের সিরিয়াস আলোচনায় এটি যে একটি কুযুক্তি তা সবাই স্বীকার করে নিয়েছেন । কিন্তু বাঙালী আসতেকদের কথা ভিন্ন ।

বিজ্ঞানী হিসাবে যারা প্যাসকেলকে চিনেন তাদের অনেকেরই ধারণা ওরকম একজন বিজ্ঞানী এধরনের আখাম্বা একটি ওয়েজার কিছুতেই দিতে পারেন না । অবশ্য প্যাসকেলের বিভিন্ন ডায়েরি/লেখা থেকে নিশ্চিতভাবে প্রমাণিত এইটা প্যাসকেলেরই কাম ।

ব্লগীয় নাস্তিকদের বিরুদ্ধে এড হোমিনেম এবং স্ট্র ম্যান (বিস্তারিত এইখানে ) কুযুক্তিতে ভরপুর একটি পোস্ট দিয়ে, কিছু মোসাহেবের হাততালি পেয়ে খুশিতে বগল বাজানো একজনের জবাবে এটা লেখা হয়েছিল মূলত।

প্যাসকেলের ওয়েজার সম্ভবত প্যাসকেলের জন্মেরও আগে থেকে ব্যাবহৃত হয়ে আসছে । এর মূল কথা হল

" ঈশ্বর থাকতেও পারেন, নাও থাকতে পারেন । কিন্তু ঈশ্বর আছেন এটা ধরে নেয়া সুবিধাজনক । কারন যদি ঈশ্বর নাই থাকেন তাহলে আস্তিক নাস্তিক দুজনেরই মরার পরে কোনো সমস্যা নাই । কিন্তু যদি ঈশ্বর থেকেই থাকেন তাহলে মরার পরে আস্তিক বেঁচে যাবেন কিন্তু নাস্তিক পড়বে ঝামেলায় । অর্থাৎ আস্তিকের বেঁচে যাবার সম্ভাবনা ১০০ ভাগ যেখানে নাস্তিকের বাঁচার সম্ভাবনা ৫০ ভাগ "

প্যাসকেলের নামের সাথে জড়ালেও এটি একটি কুযুক্তি । সাধারনভাবে কূপমন্ডুকদের খুব বেশী দেখা যায় এটি ব্যাবহার করতে, যারা তার নিজস্ব ঈশ্বরের বাইরে অন্য কোনো ধর্মের ঈশ্বরের কথা ভেবেই দেখেনা ।

এই কুযুক্তিটির স্বরুপ উম্মোচনে সাধারনভাবে গাণিতিক শব্দমালা ব্যাবহার করলে, অল্পকথায় বুঝানো যায় । কিন্তু আমি চেষ্টা করব ভারি শব্দ যথাসম্ভব কম ব্যাবহার করতে ।

দুইটি কারনে এযুক্তিটি একটি কুযুক্তি ।

কারন ১: যুক্তিটিতে কারন ছাড়াই ধরে নেয়া হয়েছে, যে ঈশ্বর একজন/একটি । এবং যে ব্যাক্তিটি বাজিটি ধরছে সে যেই ঈশ্বরে বিশ্বাসী সেটিই একমাত্র সম্ভাব্য ঈশ্বর । কোনোপ্রকারের ঈশ্বরের অস্তিত্তের পক্ষে যেহেতু কোনো পরীক্ষিত উপাত্ত নাই সেহেতু এই দুইটি প্রস্তাবনাই ভুল । ভুল প্রস্তাবনার উপরে দাঁড়িয়ে থাকা যুক্তিও কুযুক্তি ছাড়া আর কিছু নয় ।

বিভিন্ন ধর্মে এবং লোককাহিনীতে বিভিন্ন ঈশ্বরের কথা বলা আছে । তাদের প্রত্যেকের পক্ষে উপাত্ত সংখ্যা সমান । অর্থাৎ ০ টি । এখানে একটি নির্দিষ্ট ঈশ্বরের অনুসারিরা ছ্যাঁৎ করে উঠতে পারেন । তাদের ঈশ্বরের পক্ষে প্রমান ০ শূন্য নয় বলে । মিরাকল , চমৎকার আসমানী কেতাব এইগুলা হতে পারে সম্ভাব্য কারন ।কিন্তু এইগুলা যে একটি ঈশ্বরের ক্রাইটেরিয়া হবে তার কোনো কারন নাই । কারন ঈশ্বরের ক্রাইটেরিয়া কি হবে তার উপর মানুষের কোনো হাত নাই । অথবা বলা যায় ঈশ্বর নিয়ে এখনো কোন নিশ্চিত মডেল পাওয়া যায় নাই, যেটার স্বাপেক্ষে বিবেচনা করা হবে , তার ক্রাইটেরিয়া কি কি হতে পারে ।

যাই হোক ধরা যাক, মোট n সংখ্যক ঈশ্বরের কথা প্রস্তাবিত আছে পৃথীবিব্যাপী । n এর সর্বনিম্ন মান ১ (শূণ্য ঈশ্বরটাকেও একটা ঘটন সংখ্যা হিসাবে ধরে নিয়ে) । এখন একটি নির্দিষ্ট ঈশ্বরে বিশ্বাসী ব্যাক্তির পরিত্রানের সম্ভাবনা আপাতদৃষ্টিতে ২/n (যদি কোনো ঈশ্বর না থাকে, অথবা তার ঈশ্বরটিই সত্য হয় ।) যেখানে নাস্তিকের সম্ভাবনা ১/n ( কোনো ঈশ্বর নাই ) । অর্থাৎ আস্তিকের পরিত্রাণের সম্ভাবনা নাস্তিকের দ্বিগুন ।

কিন্তু n এর মান বড় হতে থাকলে, এই দ্বিগুন তখনও দ্বিগুন থাকলেও দুটো সংখ্যার পার্থক্য নাটকীয়ভাবে কমতে থাকে । এবং মোটামুটি বড় একটি n এর জন্য ১/n এবং ২/n অলমোস্ট সমান । পৃথিবীতে প্রচলিত ধর্মের সংখ্যা চার হাজারের বেশী । n = ৪০০০ ধরে নিলে আস্তিকের বাঁচার ০.০২৫% সম্ভাবনা , নাস্তিকের বাঁচার সম্ভাবনা ০% । আস্তিকের সুবিধা ০.০২৫ % বেশি । প্যাসকেলের ওয়েজারে প্রস্তাবিত সম্ভাবনার ২০০০ ভাগের একভাগ মাত্র ।

কিন্তু এই ক্ষুদ্র সুবিধাটিও ধোপে টিকে না, যখন আরেকটি সম্ভাবনার কথা স্বীকার করা হয় । প্রায় প্রত্যেক ধর্মেই, নিজটা সঠিক অন্যেরটা ভুল বলে গলাবাজি করা আছে । এখন একটা ভুল ঈশ্বরে বিশ্বাসীকে সত্যিকারের ঈশ্বর যদি শাস্তি দিয়ে থাকেন , তাহলে বিশ্বাসীর পক্ষে ঘটন সংখ্যা গিয়ে দাঁড়ায় (১+১-১)=১ ।
অর্থাৎ আস্তিক নাস্তিক দুইয়ের জন্যই বাঁচার সম্ভাবনা দাঁড়ায় ১/n, যা কারো জন্যই কম সুবিধার না, আবার কারো জন্যই বেশী সুবিধার না ।

কারন২ : ঈশ্বরের সঠিক প্রকৃতি নিয়ে মানুষে কিছু বলার নাই । ঈশ্বর যা নিজের ইচ্ছা হয় তাই করবেন । তাহলে ঈশ্বর তার অনুসারিদেরও শাস্তি দিতে পারেন, আবার তার যারা অনুসারি নয় তাদেরও শাস্তি দিতে পারেন । অসীম দয়ালু অসীম জ্ঞানী কেউ একজন, ঈশ্বরের মত বড় ব্যাপার নিয়া জুয়া খেলা একজনরে ফেভার না কৈরা, এভিডেন্স ভিত্তিক এপ্রোচ নেয়াটাকে ফেভারও করতে পারেন

এই দুইটি সম্ভাবনা যে সমান এটা কারো কারো মাথার সহজে নাই ধরতে পারে । কিন্তু বিবেচনা করুন, মানলে পুরস্কার দেয়া, না মানলে শাস্তি দেয়া এটা মানুষের বৈশিষ্ট । ধর্ম প্রচারকরা এটা ঈশ্বরের বৈশিষ্ট বলেও চালিয়ে দিতে চাচ্ছে । কিন্তু এর স্বপক্ষে কোনো পরীক্ষণলব্ধ প্রমান নাই ।

সুতরাং এই ক্ষেত্র আস্তিক নাস্তিক উভয়েরই স্বপক্ষে ঘটন সংখ্যা হবে ২ এবং উভয়ের জন্যই পরিত্রাণের সম্ভাবনা ২/n (০ ঈশ্বর অথবা অবিশ্বাসীদের পুরস্কৃতকারী ঈশ্বর, নাস্তিকের জন্য , ০ ঈশ্বর অথবা নিজ ঈশ্বর, আস্তিকের জন্য )

সুতরাং দুইটি পছন্দেরই সম্ভাবনা মূল্য সমান ।
প্যাসকেলের ওয়েজার একটি আখাম্বা ওয়েজার ।

এত প্যাঁচগোচের কথায় যাগো অস্বস্তি, তাগো লাইগা এককথায় কৈলে :

" আল্লা থাকলে বেহেশত, না থাকলে কিছু না, লসের কিছু নাই ভাইবা যারা বৈসা আছেন, যদি আল্লা না থাইকা শিব থাকে আর হেয় যদি মরার পরে কয় আমার লিঙ্গ থুইয়া তুই আল্লার ইবাদত করলি এখন এইটা তোরে সান্দানি হৈবেক , তখন ? "

৯ : আপিল টু অথরিটি (সাহেব কহিছেন, চমৎকার সে হতেই হবে) :

ঈশ্বর আছেন, কারন মহাবিজ্ঞানী আইনিসটাইনও ঈশ্বরের পক্ষে বলে গেছেন । এই জাতীয় কুযুক্তি-গুলাকে বলা যায় আপিল টু অথরিটি ফ্যালাসি । ঈশ্বরের অস্তিত্ত অনস্তিত্ত নিয়ে , একজন সাধারন মানুষের কথার চাইতে আইনিসটাইনের কথার বেশী কোনো মূল্যই নেই । তা তিনি যত বড় বিজ্ঞানীই হোন । কারন তিনি সেই ক্ষেত্রের বিজ্ঞানী নন । কিন্তু আইনিসটাইন যদি ফোটনের ধর্ম নিয়ে কোনো কথা বলে থাকেন, সেটিকে খুব বেশী না ঘাটিয়েও সত্য বলে মেনে নেয়ার একটু সুযোগ থাকে । কারন তিনি সেই ফিল্ডের বিশ্ববিখ্যাত বিজ্ঞানী ।

অবশ্য এই ক্ষেত্তে আরেকটি কুযুক্তি লক্ষ্যনীয় । আইনিসটাইন না হয় ঈশ্বরের অস্তিত্ত ফিল্ডের বিজ্ঞানী নন, কিন্তু অনেক বড় ধর্মতাত্বিক, এছলামি চিন্তাবিশারদরা যেহেতু বলছেন, তাদের কথার তো মূল্য থাকবে এ ক্ষেত্রে ।

না, তাদের কথারও মূল্য নেই । কারন অথরিটি বা কথার মূল্য প্রতিষ্ঠিত হয় পরিসংখ্যানিক উপাত্তের মাধ্যমে । একজন বড় বিজ্ঞানী বা গবেষক দীর্ঘ সময় ধরে সঠিক স্বিদ্ধান্ত দেয়ার রেকর্ড করার পরেই, পরবর্তিতে তার একটি স্বিদ্ধান্তকে একজন সাধারন মানুষের স্বিদ্ধান্তের চাইতে বেশী গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা হয় ।

ধর্মতাত্বিক, বা এছলামি চিন্তাবিশারদদের ব্যাপারটা সেরকম নয় । তারা আজ পর্যন্ত একটি ক্ষেত্রেও ঈশ্বরের অস্তিত্তের পক্ষে সন্তোষজনক উপাত্ত নিয়ে আসতে পারে নাই । অর্থাৎ তাদের গবেষণার শাখাটি এখনও একটি পরিশীলিত জ্ঞানের শাখা বলে স্বীকৃতি পাবার যোগ্য নয় । আগে তাদের গবেষণা ক্ষেত্রটি ফলাফল উৎপাদন করে, গ্রহনযোগ্য হতে হবে, তারপর তাদের অথরিটি । আর ফলাফল হতে হবে হার্ডকোর । কোনো হাদুমপাদুম জাতীয় , মনে করি একটি বেহেশতে ১০০ টা হুর আছে জাতীয় ফলাফল নয় । সিরিয়াস আলোচনায় ব্যাবহারযোগ্য, পুনরাবৃতিযোগ্য ফলাফল ।

শ্রোতার তুলনায় খুবই উচ্চস্তরের একজনের কথা বলে, শ্রোতার বিহ্বলতার সুযোগ নিয়ে, নিজ যুক্তি প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা । মডারেট, মডার্ন মোছলেমদের নিজ বিশ্বাসের, র‌্যাশনালাইযেশন করতে দেখা যায় এই যুক্তি দিয়ে ।

মাইকেল জ্যাকসন এছলাম গ্রহন করছে, অতএব এছলাম সত্য ধর্ম । খবরটি সত্য ধরে নেয়ার পরেও, মাইকেল জ্যাকসনের বরং এছলাম সম্পর্কে সাধারন মোছলেমদের চাইতেও কম জানার কথা । কম জেনে একজন একটা কাজ করেছে, এটাতে সেই কাজটার বৈধতা কোত্থকে আসে । সে বড় গায়ক ঐখান থেকে ?

১০ : নো ট্রু স্কটসম্যান (তোড়ায় বাঁধা ঘোড়ার ডিম)

এই কুযুক্তিটি সব ধর্মের লোকজনদের ব্যাবহার করতে দেখা যায় । বিশেষ করে কেরেস্তান এবং মোছলেমদের । কেরেস্তানদের ক্রুসেডের রক্তপাত ও নৃসংশতা নিয়ে আঙুল তোলা হলে তারা বলে, ঐ কেরেস্তানগুলা সত্যিকারের জেসাসের শিক্ষার উপর প্রতিষ্ঠিত কেরেস্তান ছিলো না । এইভাবে করতে করতে শেষ পর্যন্ত দেখা যায়, সত্যিকারে কেরেস্তান কেউ না, কেউ ছিলও না । তাইলে কেরেস্তান জীবন মানে যে ভালো জেবন এই যুক্তির ভিত্তি কি?

আবার মোছলেমদের যুক্তি এছলামি শাসন ব্যাবস্থা খুবই উন্নত শাসন ব্যাবস্থা , হেনতেন এইসব । যখন বলা হয়, কই এছলামি দেশগুলাতে তো শান্তি নাই, মানবাধিকার লংঘন, দারিদ্র, দুর্নীতি এগুলা এছলামিক দেশগুলাতেই তো বেশী , তখন বলে কুনো দেশেই সত্যিকারের এছলামিক শাসনব্যাবস্থা প্রতিষ্ঠিত নাই বইলাই এই ব্যাবস্থা ।

কবে কোথায় সত্যিকারে এছলামিক শাসনব্যাবস্থা প্রতিষ্ঠিত ছেল ? খুলাফে রাশেদ এর যুগে ছিল । বকর, ওমর, ওছমান আলীর যুগে । কিন্তু ওদের যুগেও তো ব্যাপক অশান্তি ছিল । বকরের আড়াই বছর গেল নিজের দেশের লুকের সাথে যুদ্ধ কর্তে কর্তেই, ওমরের দিন গেল বাইরের দেশে যুদ্ধ কর্তে কর্তে শেষে সে মারাই গেল আততায়ীর হাতে, ওছমান মারা গেল রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের হাতে গনপিটুনিতে , আলি খুন হইল কুফার মসজিদে, তাও রাজনৈতিক মোছলেম প্রতিপক্ষের হাতে যে প্রতিপক্ষ নিজেও মোহাম্মদের ছাহাবা । এইগুলা তো শান্তির নমূনা না ।

তখন পাল্টা যুক্তি আসে, ভাইরে এইগুলা তো মাইনষের ব্যার্থতা এইগুলার জন্য এছলামরে দুষ দিয়া তো লাভ নাই ।

ঠিক এইখানেই আবার স্ট্র ম্যান ফ্যালাসি শুরু হইল । মূল আলোচনাই শুরু হইল কিন্তু এছলামি শাসনব্যাবস্থার পক্ষে-বিপক্ষে , কিন্তু ঐখান থেকে ডাইভার্ট করে এছলামের সত্যতা-অসত্যতা সংক্রান্ত কুযুক্তিতে নিয়ে গেল ।

এই নো ট্রু স্কটসম্যান ফ্যালাসি কে ঘোড়ার ডিম ফ্যালাসি বলা যায় । ঘোড়ার ডিমের মতই, সত্যিকারের কেরেস্তান, সত্যিকারের এছলামিক শাসনব্যাবস্থা, সত্যিকারের মোছলেম এই জিনিসগুলা কেউ কখনো দেখে নাই, শোনে নাই । কিন্তু এইগুলার কাল্পনিক স্যাম্পল দেখিয়ে দেখিয়ে ধর্মের প্যাকেজগুলা বিক্রী করা হচ্ছে ।



১০ : নো ট্রু স্কটসম্যান (তোড়ায় বাঁধা ঘোড়ার ডিম)

এইটা নিয়ে আগের পর্বেও ব্যাখ্যা ছিল, কিন্তু বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নভাবে আমি এই কুযুক্তিটির মুখোমুখি এত বেশী হয়েছি যে, ব্যাখ্যা করে সবসময় একটু অতৃপ্তি থেকেই যায় ।

যাই হোক, এটি একটি বাইন মাছের মত পিছলে যাওয়া যুক্তি । ফলাফল ধরে কোনো মতবাদের সমালোচনা করতে গেলে যুক্তি দেয়া যে আলোচ্য ক্ষেত্রে মতবাদটি বিশুদ্ধরুপে প্রয়োগ করা হচ্ছে না, এতটুকু পর্যন্ত ঠিকাছে । কিন্তু একটি একটি করে ক্ষেত্র বিবেচনা করে গিয়ে শেষ পর্যন্ত যখন দেখা যায় কোনো ক্ষেত্রেই মতবাদটি ফলাফল উৎপাদন কর্তে পারে নাই, তখনও মতবাদটি ঠিক কিন্তু প্রয়োগে ভুল বলে বসে থাকাটাই হল ঘোড়ার ডিম ফ্যালাসি ।

এই পর্যন্ত প্রযুক্ত সব ক্ষেত্রে যে মতবাদ ব্যার্থ সেইটারে আঁকড়াইয়া ধইরা বইসা থাকার কোন কারণ নাই । এছলামি সুশাসন, কমিউনিজম এইগুলা এধরনের মতবাদের মধ্যে পড়ে ।

ব্যাপারটা এরকম, বিএনপি কি করছে সেটা দিয়ে নয় বরং বিএনপির গঠনতন্ত্রে কি আছে সেটা দিয়েই বিএনপিকে যাচাই করা উচিৎ । ওরকম করতে গেলে বাংলাদেশের কোনো দলকেই খারাপ বলার চান্স নেই । জামাত হওয়া উচিৎ সামান্যতম এছলামের ছিঁটেফোঁটা যাদের মধ্যে আছে তাদের ফেভারিট দল ।

১১ : আপিল টু কনসিকিউয়েন্স : (হায় হায় সব রসাতলে যাবে এবার, অথবা সত্যের মতো বদমাশ)

একটি সত্য বলে ধরে নেয়া ব্যাপার যদি মিথ্যা হয় তাহলে তার প্রভাব খুবই খারাপ হবে, অতএব ঐ সত্যটি কোনোভাবেই মিথ্যা হতে পারে না, জাতীয় কুযুক্তি হচ্ছে "রসাতলে যাবে সব" জাতীয় কুযুক্তি ।

ঈশ্বর নাই ধরে নিয়ে, ধর্ম না থাকলে লোকজন সব চুরি ডাকাতি লুটপাট ধর্ষণ রাহাজানি শুরু করবে এই ভয়ে ঈশ্বরের সিস্টেমটাকে টিকিয়ে রাখার পক্ষে যুক্তি শোনা যায় অহরহ । বিশেষ করে মডারেট মোছলেমদের পক্ষ থেকে । যারা যৌক্তিকভাবে ঐশ্বরিক ধারনাটিকে মেনে নিতে না পেরে, প্রতিক্রিয়া কি হবে সেটা ভেবে নিজেদের ভয় দেখিয়ে আবার এছলামের সুশীতল ছায়াতলে নিজেদের ফিরিয়ে আনেন । বা নিজেরা অতটা সিরিয়াসলি না মানলেও অন্যদের যে ঈশ্বরকে মানা দরকার আছে সেটা নিয়ে লেকচার দেন । তাদের আবার নিজ চরিত্রের উপর অগাধ আস্থা কিন্তু অন্যের চরিত্রের উপর আস্থা নাই বিন্দুমাত্র ।

প্রস্তাবিত প্রতিক্রিয়ার মডেলটি ঠিক না বেঠিক সে আলোচনায় না গিয়েই, এটি যে একটি আখাম্বা কুযুক্তি তা বোঝা যায় । সত্য কনসিকিউয়েন্স এর উপর নির্ভর করে না, বরং কনসিকিউয়েন্স তৈরী করে । সেটা কখনো খারাপ হয় কখনো ভালো হয় । সেখানে সত্যের বা সত্য আবিষ্কারকারীর কিছু করার থাকে না ।

ইউরেনিয়াম পরমানুকে নিউট্রন দিয়ে আঘাত করলে বিপুল শক্তি উৎপাদিত হবে, এর সাথে তার ফলশ্রুতিতে হিরোসিমা নাগাসাকিতে নরক নেমে আসা বা না আসার কি সম্পর্ক ?! হিরোশিমায় বোমা ফেলা হবে কি না হবে তারও কোটি কোটি বছর আগে থেকেই ইউরেনিয়াম পরমানুর ধর্ম ঐরকমই আছে ।

আমার ক্যান্সারের খবর যদি সত্য হয় তাহলে, আমার আম্মা শুনে মারাই যেতে পারেন, আমার পরিবারে ঝড় বয়ে যেতে পারে । কিন্তু এর উপর তো আমার ক্যান্সার হওয়া না হওয়া নির্ভর করবে না ।

১২ :আপিল-টু-পপুলারিটি দশে মিলি করি কাজ হারি জিতি নাহি লাজ)

একটি প্রস্তাবিত ধারনা বিপুল সংখ্যক জনগোষ্ঠীর মধ্যে সত্য বলে প্রচারিত, শুধু এই তথ্যের ভিত্তিতে ধারনাটিকে সত্য বলে যুক্তি দেখানো হচ্ছে, আপিল-টু-পপুলারিটি কুযুক্তি ।

ইনতারনেতের বিভিন্ন ফোরামে প্রায়ই এই কুযুক্তিটি দেখি । ১.৬ বিলিয়ন লোক যে কোরানকে সত্য বলে মানে তারা কি হুদাই মানে ? কোরান সত্য না হলে কি তারা মানত ? এই জাতীয় কুযুক্তি অহরহ ।

১.৬ বিলিয়ন লোকের মধ্যে ঠিক কত কোটি লোক তার একটা অক্ষর বুঝে সে হিসাবে না গিয়েও এটা একটা কুযুক্তি সেটা বোঝা যায় । সত্য কথা সাধারনভাবে অজনপ্রিয় হয়ে থাকে । মাত্র কয়েকশ বছর আগেও পৃথীবিব্যাপি সবাই বিশ্বাস করত পৃথীবিটা চ্যাপ্টা আর তারপাশে সূর্য ঘুরছে । কিন্তু সবার বিশ্বাস পৃথীবি সংক্রান্ত সত্যের ব্যাপারে কিছু করতে পারে নি । কেবল তার বের হয়ে আসাকে দেরি করাতে পেরেছে ।

এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে অনেক লোক-কাহিনী , লৌকিক বিশ্বাস, কুসংস্কার প্রচলিত আছে, যার বিশ্বাসীর সংখ্যা হিসাব করলে কোনো কোনো ক্ষেত্রে ১.৬ বিলিয়ন এর বেশীও হতে পারে । কিন্তু সরাসরি কার্যকারন সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করার আগ পর্যন্ত সেটা বিশ্বাসীদের সংখ্যাধিক্যের কারনে সত্য হয়ে যায় না । (আবার মিথ্যাও হয়ে যায়না , মোট কথা ঐটার সত্যাসত্য নির্ভর করবে ঐটার নিজের উপর , কতজন বিশ্বাস করলো কি করলোনা তার উপর না )



১৩ : আপিল টু কমন প্র্যাকটিস : (দশজনে করে যাহা তুমিও করিবে তাহে )

এটি সাধারণত বিচার্য কোনো ব্যাক্তি বা সংঘের কর্মকাণ্ডকে ডিফেন্ড করার জন্য ব্যাবহৃত হয়ে থাকে । একটি কাজ, কোনো সমাজে মোটামুটি দৃষ্টিগ্রাহ্য সংখ্যার লোকজন, সাধারণভাবে করে থাকে বলে কাজটিতে খারাপ কিছু নেই বলে দাবী করা হচ্ছে আপিল টু কমন প্র্যাকটিস ফ্যালাসি ।

সমাজে অনেক অনৈতিক কাজই প্রচলিত ছিল, এবং এখনো আছে । শুধুমাত্র প্রচলিত বলে কাজটিকে ত্রুটিহীন বলে দাবী করা যায় না ।

হাদিসের বিভিন্ন অপ্রীতিকর ঘটনার আলোচনায়, এ কুযুক্তিটি প্রায়ই আসে । তখনকার সমাজে এগুলো স্বাভাবিক ব্যাপার ছিল, অতএব এগুলোতে কোনো সমস্যা নাই ।

যুগের প্রচলিত খারাপ কাজগুলাতে যদি কোনো সমস্যা নাই থাকতো তাহলে খারাপ কাজগুলাতো কখনোই খারাপ বলে গন্যও হতো না ।

১৪ : গিল্ট বাই এসোসিয়েশন ( তুই শয়তানের ভাই, তুই চুপ থাক )

ইতিহাসের কোনো কুখ্যাত ব্যক্তি প্রস্তাবনার পক্ষে ছিল, শুধুমাত্র এই কারণে প্রস্তাবনাটি ভুল বলে দাবী করা, হচ্ছে "শয়তানের ভাই " ফ্যালাসি ।

তুমি কইতাছ ঈশ্বরের অস্তিত্তের পক্ষে কোনো প্রমান নাই, হিটলার স্টালিনও একই কথা কইছে অতীতে, তুমি তাদের পর্যায়ে নাইমা গেলা । তুমার সব কথা ভুল। এই জাতীয় ধুনফুন সিরিয়াস আলোচনায় সাধারনত আসে না । কিন্তু তাও বলে রাখি ।

সত্য কারো স্বীকার করা না করার উপর নির্ভর করে না । হিটলার বলেছিল পৃথীবি গোল, সেটা হিটলার অনেক খারাপ লোক বলে মিথ্যা হয়ে যাবে না ।

১৫ : গোল্ডেন মিন ফ্যালাসি (উত্তম নিশ্চিতে চলেন অধমের সাথে, তিনিই মধ্যম চলেন যিনি পশ্চাতে)

প্রস্তাবনা এবং তার বিপরীত প্রস্তাবনার মাঝামাঝি কোনো অবস্থানে সত্য অবস্থান করে বলে, ' ক্ষেত্র নির্বিশেষে' , সমস্ত প্রস্তাবনার জন্য , এরকম মনে করা হচ্ছে গোল্ডেন মিন ফ্যালাসি । বা মধ্যপন্থীর কুযুক্তি বলা যায় । অনেক অবশ্য একে মেরুদন্ডহীনের যুক্তি বলে থাকেন ।

কিন্তু আমার মনে হয়, দ্বান্দিক বস্তুবাদকে ভালোমত না বুঝে জীবনের সব ক্ষেত্রে ঢালাওভাবে প্রয়োগ করতে যারা চান, তারা এই ফ্যালাসিতে আক্রান্ত হন বেশী । সব সময় মেরুদন্ডহীনতার কারনে নয় ।

অর্থনৈতিক ও সামাজিক বিভিন্ন সমস্যার সমাধান প্রস্তাবে দ্বান্দিক বস্তুবাদ যেমন চমৎকার সহায়ক, তেমনি নৈতিক বা প্রাকৃতিক সত্যের অনেক ব্যাপরেই এর প্রয়োগ অযৌক্তিক ও সত্য সত্যই প্রস্তাবকের মেরুদন্ডহীনতার প্রকাশ ।

দাস-প্রথা খারাপ বলে কিছু লোক, আবার দাস-প্রথা ভালো বলে কিছু লোক, অতএব দাস-প্রথার ভালো দিক এবং খারাপ দিক দুটোই আছে । সুতরাং দাস-প্রথা পুরোপুরি বিলুপ্ত করা ঠিক হবে না । শুনেই বুঝা যাচ্ছে কি ধরনের আখাম্বা কুযুক্তি এটি ।

এই কুযুক্তিটি আবার অনেক মডারেট মোছলেমের জীবন সংক্রান্ত ভয়কে মোহ দিয়ে মাখিয়ে রাখার একটি অবলম্বন। নাস্তিকরা খোদার বিপক্ষে এবং মূর্তির পক্ষে, আস্তিকরা খোদার পক্ষে এবং মূর্তির বিপক্ষে, অতএব তারা মধ্যপন্থী, দুজনেরই একটি একটি করে দাবী মেনে নিয়ে তারা খোদার পক্ষে এবং মূর্তিরও পক্ষে ।

একইরকমভাবে তারা সত্যকে সরাসরি ফেইস না করে নিজেদের কুযুক্তির ঘর সাজায়, নাস্তিকদের সব কথা সত্য নয় অতএব ঈশ্বর হয়ত আছেন, আবার মৌলবাদিদের সব কথা সত্য নয় অতএব আল্লার আইন আসলে অত কঠিন নয় । এইভাবে তারা মূলত নিজেদের সুবিধার্থে সত্য মিথ্যার হার্ডকোর যাচাই-বাছাইয়ে না গিয়ে, বালিতে নিজেদের মুখ ডুবিয়ে রাখে ।

১৬ : পয়জনিং দা ওয়েল (খেলুম না, খেলতেও দিমু না)

প্রস্তাবককে তার বক্তব্য উপস্থাপনের সুযোগ না দিয়েই, তার উপর ব্যাক্তিগত আক্রমনও গালিগালাজের মহোৎসব চালিয়ে পুরো প্রক্রিয়াটি ভন্ডুল করে দিয়ে বিজয়ীর বেশে সহযোগীরা একে অপরের ***চাটন প্রনালীকে বলা যায় "খেলতে দিমু না " ফ্যালাসি ।

Sunday, April 26, 2009

১৯৭১ মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস; মুহম্মদ জাফর ইকবাল

যেহেতু এখানে সরাসরি কোনো বই/ ডকুমেনন্টস আপলোড করা যায় না, তাই আমি নিচে লিংক দিলাম।
এবার থেকে কিছু ভালো বই বা ডকুমেনন্টস এর লিন্ক দেবার চেষ্টা করব।

http://www.scribd.com/doc/14650398/1971-Jafor-Iqbal

Sunday, April 19, 2009

আপনার কম্পিউটার এর বেসিক তথ্য জানুন

আপনার পিসিটির বেসিক সব তথ্য যা আপনার প্রয়োজন হতে পারে যেকোন সময়। আর জানতে হলে অনেক গুলো উপায়ের মধ্যে সবচেয়ে চমৎকার পদ্ধতি বোধহয় এটাই । ট্রাই করে দেখেন;

Click on Start Menu
Run এ CMD লিখে এন্টার দিন।
কমান্ড প্রম্পট আসলে লিখুন systeminfo
এবার এন্টার দিন।
ব্যস হয়ে গেল। দেখুন আপনার পিসির নাড়ী ভূড়ীর খবরা খবর বাহির হয়ে আছে।
মজা পাইলে থ্যাঙ্কু দেন, না পাইলেও দেন। কষ্ট কইরা লিখছি।

Thursday, April 9, 2009

গত নির্বাচনে দুই নেত্রীর হলফনামা

সুত্র: http://priyo.com/forum/20081208/16993

বাগেরহাট-১ আসনে হাসিনার সম্ভাব্য ব্যয় ১১ লাখ টাকা
সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা এবার সম্ভাব্য নির্বাচনী ব্যয় ধরেছেন ১১ লাখ টাকা। এই টাকা তিনি নিজ তহবিল থেকে খরচ করবেন।

বাগেরহাট-১ আসনে মনোনয়নপত্রের সঙ্গে জমা দেওয়া হলফনামায় শেখ হাসিনা এই তথ্য দিয়েছেন। তিনি এবার বাগেরহাট ছাড়া গোপালগঞ্জ-৩ এবং রংপুর-৬ আসন থেকেও প্রার্থী হয়েছেন।

বাগেরহাটের মতো গোপালগঞ্জ-৩ আসনের মনোনয়নপত্রেও আওয়ামী লীগের সভানেত্রী একই তথ্য দিয়েছেন। উভয় মনোনয়নপত্রে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শিক্ষাগত যোগ্যতা ‘বিএ’ এবং পেশা রাজনীতি বলে উল্লেখ করেছেন।

মনোনয়নপত্রের সঙ্গে জমা দেওয়া আয়কর হিসাব বিবরণী অনুযায়ী, শেখ হাসিনার সম্পদের প্রকৃত পরিমাণ তিন কোটি ৫৪ লাখ দুই হাজার ৯০৪ টাকা। তাঁর বছরে মোট আয় ২৯ লাখ ৭৭ হাজার ৬৭ টাকা। এর মধ্যে গৃহসম্পত্তি থেকে আয় চার লাখ ৪৮ হাজার টাকা, কৃষি থেকে আয় সাড়ে চার লাখ টাকা এবং ব্যাংকে আমানতের ওপর পাওয়া সুদ থেকে আয় ২০ লাখ ৭৯ হাজার ৬৭ টাকা।

শেখ হাসিনার সম্পত্তির মধ্যে আছে কৃষিজমি: নিজ নামে চার একর (অর্জনকালীন মূল্য পৌনে দুই লাখ টাকা), স্বামীর নামে এক একর (মূল্য: ১৫ হাজার টাকা)। যৌথ মালিকানাধীন পাঁচ একর জমির অর্ধেকের মালিক তিনি। দালান ও বাড়ি আছে, যার অর্জনকালীন মূল্য ৬৪ লাখ তিন হাজার ৯৫২ টাকা। গাড়ি আছে দুটি, যার একটির (ক্রয়মূল্য) ছয় লাখ টাকা এবং আরেকটি উপহার হিসেবে পেয়েছেন। স্বর্ণালংকার আছে ১৩ লাখ ২৫ হাজার টাকার ও আসবাবপত্র সাত লাখ ৪০ হাজার টাকার।

শেখ হাসিনার কাছে এখন নগদ ও ব্যাংকে জমা আছে তিন কোটি ১৮ লাখ ৮৪ হাজার ৯০৪ টাকা।
তাঁর বছরে পারিবারিক ব্যয় দুই লাখ টাকা। মোটরযান-সংক্রান্ত খরচ বছরে ২০ হাজার টাকা। তিনি গত অর্থবছরে পারিবারিক ব্যয় ও আয়কর দেওয়াসহ খরচ করেন ১০ লাখ ৯৫ হাজার ৩৫১ টাকা। তাঁর কোনো প্রকার ঋণ বা দায় নেই বলেও উল্লেখ আছে।
হলফনামা অনুযায়ী, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে বর্তমানে ফৌজদারি মামলার সংখ্যা ১৬টি। এর মধ্যে ১০টি হাইকোর্টের নির্দেশে স্থগিত, চারটি তদন্তাধীন, একটি পুনঃতদন্তাধীন ও একটির অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় চুড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে। অতীতে ফৌজদারি মামলার সংখ্যার কলামে বলা হয়েছে, মামলা হয়েছিল। তবে মামলা নম্বর ও যে আদালত মামলা আমলে নিয়েছিল, তা জানা নেই। তবে ফলাফল বেকসুর খালাস।

শেখ হাসিনা ইতিপূর্বে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে ভোটারদের দেওয়া প্রতিশ্রুতি পূরণসংক্রান্ত ঘরে দীর্ঘ বিবরণ দিয়েছেন। এর মধ্যে নির্বাচনী ইশতেহার মোতাবেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, রাস্তা, সেতু, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, বিধবা ভাতা, বয়স্ক ভাতা, গৃহায়ণ কর্মসুচি, বৃদ্ধাশ্রম, শিক্ষা উপবৃত্তি, আর্সেনিকমুক্ত পানি প্রকল্প, দুস্থ পুনর্বাসন ও প্রশিক্ষণকেন্দ্র স্থাপনসহ বিভিন্ন উন্নয়ন ও সামাজিক কার্যক্রমে ৮৫ থেকে ৯০ শতাংশ পূরণ করেছেন।
প্রতিবেদন তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন: আহাদ হায়দার, বাগেরহাট ও সুব্রত সাহা বাপী, গোপালগঞ্জ

ফেনী-১ আসনে খালেদার সম্ভাব্য ব্যয় পাঁচ লাখ টাকা
সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ার-পারসন খালেদা জিয়ার ফেনী-১ আসনে (পরশুরাম, ফুলগাজী, ছাগলনাইয়া) এবার নির্বাচনে সম্ভাব্য ব্যয় বরাদ্দ পাঁচ লাখ টাকা। তিনি বাড়ি ভাড়া ও ব্যাংকে জমা রাখা টাকার সুদ থেকে এই টাকা খরচ করবেন। মনোনয়নপত্রের সঙ্গে তাঁর জমা দেওয়া হলফনামায় তিনি এ তথ্য দিয়েছেন।

মনোনয়নপত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতার ঘরে খালেদা জিয়া লিখেছেন ‘স্বশিক্ষিত’। তিনি কোনো শিক্ষাসনদ জমা দেননি। পেশা উল্লেখ করেছেন রাজনীতি। গত নির্বাচনে দেওয়া প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের ঘরে উল্লেখ করেছেন ‘প্রযোজ্য নয়’।

মনোনয়নপত্রের সঙ্গে সংযুক্ত গত ৬ নভেম্বর জমা দেওয়া আয়কর বিবরণী অনুযায়ী খালেদা জিয়ার সম্পদের প্রকৃত পরিমাণ তিন কোটি ৭৩ লাখ ৪৭ হাজার ৫৩৫ টাকা। বছরে তাঁর মোট আয় ১২ লাখ ৯৭ হাজার ১৮৩ টাকা। এর মধ্যে বছরে বাড়ি ভাড়া থেকে পাঁচ লাখ ২৩ হাজার ৮০০ টাকা এবং ব্যাংকে রাখা আমানত থেকে সুদ বাবদ সাত লাখ ৭৩ হাজার ৩৮৩ টাকা আয় করেন তিনি।

মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার তারিখ পর্যন্ত তাঁর অস্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে হাতে নগদ ৩৬ লাখ ৫২ হাজার ৮৪৫ টাকা। আর ব্যাংকে জমা আছে দুই কোটি ৭৫ লাখ ৪২ হাজার ২৮৫ টাকা। এ ছাড়া তিনটি গাড়ি− ১৬০০ সিসি মোটর কার, টয়োটা জিপ, নিশান জিপ। দাম দেখান হয়েছে কেনার সময়ের−৫৪ লাখ ৪৫ হাজার টাকা। তাঁর ৫০ তোলা স্বর্ণালংকার আছে, যা বিয়ের সময় উপহার হিসেবে পেয়েছেন বলে উল্লেখ করেছেন খালেদা জিয়া। ইলেক্ট্রনিকসামগ্রী আছে চার লাখ ৩৫ হাজার টাকার এবং আসবাব দুই লাখ ৬০ হাজার টাকা মূল্যের।
খালেদা জিয়ার গৃহসম্পত্তির মধ্যে বাড়ি ও দালান আছে দুটি। একটি ঢাকা সেনানিবাসের ৬ শহীদ মইনুল সড়কে; আরেকটি ১৯৬, গুলশান এভিনিউ, ঢাকায়। বাড়ি দুটির অর্জনকালীন মূল্য উল্লেখ করা হয়েছে যথাক্রমে পাঁচ টাকা ও ১০০ টাকা। প্রসঙ্গত, বাড়ি দুটি সাবেক রাষ্ট্রপতি এইচ এম এরশাদের আমলে দেওয়া। এ ছাড়া উত্তরা থানার উত্তরখানে আট শতাংশ জমি (দাম তিন হাজার ৩০০ টাকা) ও সাভারে ১৭৬৮ অযুতাংশ জমি রয়েছে বিএনপির নেত্রীর। তাঁর কোনো ঋণ বা দায় নেই।

খালেদা জিয়া তাঁর বাৎসরিক মোট ব্যয় উল্লেখ করেছেন তিন লাখ টাকা। এর মধ্যে ব্যক্তিগত ভরণ-পোষণ এক লাখ ২০ হাজার টাকা। যানবাহনসংক্রান্ত যাবতীয় খরচ ৮৪ হাজার টাকা এবং উৎসবসহ অন্যান্য বিশেষ ব্যয় ৯৬ হাজার টাকা।

মামলা: খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে বর্তমান সরকারের আমলে দায়ের করা ফৌজদারি মামলার সংখ্যা চার এবং সবই হাইকোর্টের নির্দেশে স্থগিত আছে বলে হলফনামায় উল্লেখ করা হয়। অতীতে ফৌজদারি মামলার সংখ্যা শীর্ষক কলামে বলা হয়েছে, মামলা হয়েছিল। তবে মামলা নম্বর এবং কোন আদালত মামলা আমলে নিয়েছিলেন, তা জানা নেই। তবে ফলাফল বেকসুর খালাস।

খালেদা জিয়া বগুড়া-৬ ও ৭ নং আসনে চার দলীয় জোটের প্রার্থী হয়েছেন। মনোনয়নপত্রে খালেদা জিয়া শিক্ষাগত যোগ্যতা হিসেবে ‘স্বশিক্ষায় শিক্ষিত’ বলে উল্লেখ করেছেন।

প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছেন আবু তাহের, ফেনী

যদি দেশের সমস্ত অনাথ দের উপর আল্লাহ এমন রহম করতো! by Mr. ANIK

জিয়ার মৃত্যুর পর যদি কিছু মনে না করেন অনুষ্ঠানে ছেড়া গেঞ্জী এবং ভাঙা সু্টকেসের কাহিনী শুনে কান্নার রোল ছড়িয়ে পড়ে ছিল ঘরে ঘরে । অফিস আদালত থেকে কোর্ট কাচারীতে একই প্রশ্ন ছিল এই স্বল্প শিক্ষিত অসহায় বিধবার প্রতিদিনের অন্ন যোগাড়, মাথা গোঁজার এতটুকু ঠাই, এতিম সন্তানদের পড়াশোনার ব্যয় কিভাবে নির্বাহ হবে । কিন্তু রাখে আল্লাহ মারে কে? সেই সময় তার পাশে হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল কোমল মনের এরশাদ সাহেব । মাথা গোঁজার জন্য দিলেন বাড়ি। মাত্র ৫ টি টাকার নোটের বদলে নিরাপদ সেনানিবাসের এলাকায়।

এরপর এই মহীয়সী নারীর উপর উপরওয়ালার মেহেরবানীতে বরকতের দুয়ার খুলে গেল । মাত্র দুই যুগের কিছু সময়ে বছরে ১৩ লাখ টাকা আয়ের একটি পরিবার এবং পোনে চার কোটি টাকার সম্পত্তির মালিক বানিয়ে দিলেন উপরওয়ালা।

দেশের হাজারও এতিম গরীব বিধবারা নামাজের সেজদায় কত পড়ে । আল্লাহ কে ডাকে। তাদের কপাল খোলে না । মঙ্গায় বন্যায় তারা ধু্ঁকে ধুঁকে মরে । খালেদা জিয়ার উপর যে রকম রহমত নাজিল হয়েছে যদি একই রকম রহমত তাদের উপর নাজিল হতো, বিশ্ব ব্যাঙ্ক, আইএমএফের কাছে হয়তো আমাদের হাত পাততে হতো না ।


চলুন এক নজরে দেখি রহমতের কিছু নজির:
----------------------------------------------------------------
মনোনয়নপত্রের সঙ্গে সংযুক্ত গত ৬ নভেম্বর জমা দেওয়া আয়কর বিবরণী অনুযায়ী খালেদা জিয়ার


সম্পদের প্রকৃত পরিমাণ : ৩,৭৩, ৪৭, ৫৩৫.০০ টাকা
বছরে তাঁর মোট আয় : ১২, ৯৭, ১৮৩.০০ টাকা
ক. বছরে বাড়ি ভাড়া থেকে আয়: ৫, ২৩, ৮০০.০০ টাকা
খ. ব্যাংকে রাখা আমানত থেকে সুদ: ৭,৭৩, ৩৮৩.০০ টাকা

মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার তারিখ পর্যন্ত তাঁর অস্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে
ক. হাতে নগদ (ক্যাশ): ৩৬,৫২, ৮৪৫.০০ টাকা
খ. ব্যাংকে জমা আছে: ২,৭৫, ৪২, ২৮৫.০০ টাকা
গ. ‌১৬০০ সিসি মোটর কার,
ঘ. টয়োটা জিপ,
ঙ. নিশান জিপ
দাম দেখান হয়েছে কেনার সময়ের: ৫৪, ৪৫,০০০.০০ টাকা

চ. স্বর্ণ: তাঁর ৫০ তোলা স্বর্ণালংকার আছে, যা বিয়ের সময় উপহার হিসেবে পেয়েছেন বলে উল্লেখ করেছেন খালেদা জিয়া।
ছ. ইলেক্ট্রনিকসামগ্রী: ৪, ৩৫,০০০ টাকার
জ. আসবাব: ২, ৬০,০০০ টাকার

খালেদা জিয়ার গৃহসম্পত্তির মধ্যে
ঝ. ৬ শহীদ মইনুল সড়কের বাড়ি: ৫.০০ টাকা
ঞ. ১৯৬, গুলশান এভিনিউর বাড়ি(অর্জনকালীন মূল্য): ১০০.০০ টাকা

জমি
চ. উত্তরা থানার উত্তরখানে আট শতাংশ জমি: ৩, ৩০০০.০০ টাকা
ছ. সাভারে ১৭৬৮ অযুতাংশ জমি

ঋণ এবং ব্যয়:
ক. তাঁর কোনো ঋণ বা দায় নেই।
খ. বাৎসরিক মোট ব্যয়:
তিন লাখ টাকা। এর মধ্যে ব্যক্তিগত ভরণ-পোষণ এক লাখ ২০ হাজার টাকা। যানবাহনসংক্রান্ত যাবতীয় খরচ ৮৪ হাজার টাকা এবং উৎসবসহ অন্যান্য বিশেষ ব্যয় ৯৬ হাজার টাকা।

Tuesday, April 7, 2009

জগৎজ্যোতি! যিনি ছিলেন বাংলার প্রথম বীরশ্রেষ্ঠ

ফিরে দেখা ইতিহাস
জগৎজ্যোতি! যিনি ছিলেন বাংলার প্রথম বীরশ্রেষ্ঠ
ভাস্কর চৌধুরী


একজন জগৎজ্যোতি! বাংলাদেশের প্রথম বীরশ্রেষ্ঠ! যাকে ’৭১ এর ১৬ নভেম্বর শহীদ হবার পর অনন্য বীরত্ব প্রদর্শনের জন্য অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ মরণোত্তর খেতাব প্রদানের ঘোষনা দেয়া হয়। কেন ঘোষনা দিয়েও জগৎজ্যোতিকে প্রদান করা হলো না মরনোত্তর সর্বোচ্চ খেতাব- এই প্রশ্নের উত্তর আজো অজ্ঞাত। জগৎজ্যোতির সহযোদ্ধা আর মুক্তিযোদ্ধাদের গবেষকরাও আজও খুঁজে বেড়ান এই প্রশ্নের উত্তর।

আর আজ তাকে নিয়েই এ আয়োজন।

সূর্যের লাল আভাটা পশ্চিমাকাশে! সময় তার শেষ সন্ধায় দাঁড়িয়ে। যুদ্ধের মিশনে এক যোদ্ধার মরণপণ চালিয়ে যাওয়া ক্রান্তিকাল। সহযোদ্ধাদের পালানোর সুযোগ করে দিয়ে মরনপন লড়াই চালিয়ে যাওয়া যোদ্ধা। হঠাৎ! পাশে থাকা সহযোদ্ধাও গুলিবিদ্ধ। নিজের মাথার গামছা খুলে বেঁধে রক্তপড়া বন্ধ করেন সহযোদ্ধার। পালানোর প্রস্তাব। কিন্তু না! গর্জে ওঠে তার বীরকন্ঠ। তেজোদীপ্ত সুরে বলে- ‘পালাবো না, সবকটাকে শেষ করে তবে যাবো।’ তারপর ! একাই ১২ জন পাকসেনাকে খতম। অস্ত্রভান্ডারও শূন্য। তবু পিছু ফেরা নয়! আচমকা একটা বুলেট সূর্যের লাল আভাটার ন্যায় বিদ্ধ হয় যোদ্ধার শরীরে। শেষবারের মতো চিৎকার করে ওঠা- ‘আমি যাইগ্যা’।
শেষ চিৎকার! সূর্যের প্রদীপ নিভে যাওয়ার সাথে সাথে এক যোদ্ধার আলোও নিভে যায়! বলছি যোদ্ধা নামের সেই ব্যক্তিটির কথা। যুদ্ধের ময়দানে যার হাত দিয়ে তৈরি হয় মুক্তিযোদ্ধাদের সমন্বয়ে ‘দাস পাটির্’। যাকে ’৭১ এর ১৬ নভেম্বর শহীদ হবার পর অনন্য বীরত্ব প্রদর্শনের জন্য অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ মরণোত্তর খেতাব প্রদানের ঘোষনা দেয়া হয়। সেই যোদ্ধা, সেই খেতাব যার গলায় পরার কথা তিনি আমাদের অহংকার ‘জগৎজ্যোতি’। আমাদের নিজস্ব মানচিত্র আর নিজস্ব পতাকার মালিকানা দিয়ে চিরদিনের জন্য বিদায় নেয় সেই ‘জগৎজ্যোতি’ দাস। অথচ তার প্রাপ্য সেই সর্বোচ্চ খেতাব আজও তাকে দিতে পারেনি দেশ!

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়েই মুক্তিযুদ্ধের উত্তরপূর্ব রণাঙ্গণের মুক্তি সেনাদের কাছে কিংবদন্তিতে পরিণত হয় জগৎজ্যোতির বীরত্বগাথা সংগ্রামের কাহিনী। আজও তার কথা ভুলতে পারেনি যুদ্ধকালীন সময়ে তার সহযোদ্ধারা। তাদের চোখে এখনো ভাসে জগৎজ্যোতির সাথে তাদের শেষ দেখা।

একটি সম্মুখযুদ্ধে পাকবাহিনীর দোসরদের কূটচালের ফাঁদে পড়ে আর নিজ সহযোদ্ধাদের বাঁচাতে গিয়ে আত্ম উৎসর্গ করেন জগৎজ্যোতি দাস। তবে তার আগেই শহীদ জগৎজ্যোতি অমর বীরত্বগাথার মাধ্যমে নিশ্চিত করে যান আমাদের নিজস্ব মানচিত্র আর নিজস্ব পতাকার মালিকানা। বিগত আ’লীগ শাসনামালে শহীদ জগৎজ্যোতির পরিবারকে একখন্ড জমি দেয়ার অঙ্গীকার করেছিলেন মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে জগৎজ্যোতিরই নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। সেই অঙ্গিকারটিও কেবল ফাঁকা বুলির মধ্যেই থেকে গেছে। বাস্তবায়িত হয়নি আজও। ফলে মুক্তিযুদ্ধের অনন্য অবদানের জন্য মরনোত্তর সর্বোচ্চ খেতাব অর্জনকারী প্রথম ব্যক্তিটির উত্তরসূরীরা এখন যাযাবরের মতো জীবন কাটাচ্ছেন। এককালে তাদের নিজেদের যে বাড়িটা ছিলো, ’৭১-এ জগৎজ্যোতিকে হত্যা করে সেই বাড়িটিতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছিলো হায়েনারা। তারপর অভাবের তাড়নায় ভিটেমাটিও বিক্রি করে ফেলে জগৎজ্যোতির পরিবার। এখন জগৎজ্যোতির উত্তরসূরীরা হবিগঞ্জে ভাড়া করা বাড়িতে থাকেন। দিনমুজুরের কাজ করে টেনে চলেন জীবিকার জোয়াল।


একজন ‘জগৎজ্যোতি’
গ্রামের নাম জলসুখা। হবিগঞ্জের আজিমিরগঞ্জ উপজেলার ছোট্ট একটি গ্রাম। সেই গায়ের জীতেন্দ্র চন্দ্র দাস ও হরিমতি দাসের কনিষ্ঠ পুত্র জগৎজ্যোতি দাস। জগৎজ্যোতির জন্ম ১৯৪৯ সালের ২৬ এপ্রিল। বাবা ও বড় ভাই রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন।
দারিদ্রতার সাথে লড়াই করেই ১৯৬৮ সালে ২য় বিভাগে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন জগৎজ্যোতি।


দাস পার্টি
১৯৭১ সালে জগৎজ্যোতি ছিলেন সুনামগঞ্জ ছাত্র ইউনিয়নের প্রথম সারির কর্মী। সশস্ত্র যুদ্ধে অংশ নেয়ার লক্ষে সদলবলে ভারতের শিলংয়ে ট্রেনিং নিতে যান তিনি। নেতৃত্বগুন সম্পন্ন, নেতৃত্বের প্রতি সংবেদনশীলতা, কঠোর পরিশ্রমি এবং ইংরেজি ও হিন্দি ভাষার দক্ষতা থাকার কারনে সে দলের নেতা মনোনিত হন জগৎজ্যোতি। জ্যোতির নেতৃত্বাধীন এই দলটিই পরবর্তীতে ‘দাস পার্টি’ হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।
মুক্তিযুদ্ধকালে পাকিস্তানী ও রাজাকারদের কাছে দাস পার্টি ছিলো মূর্তিমান আতঙ্কের নাম। আর মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে সাফল্যের প্রতীক। মুক্তিযুদ্ধে টেকেরঘাট সাব-সেক্টরের অধীনে বিস্তৃর্ণ ভাটি অঞ্চল শত্রুমুক্ত রাখার দায়িত্ব পড়ে জগৎজ্যোতির উপর। দিরাই, শাল্লা, ছাতক, আজমিরিগঞ্জ, বানিয়াচং, জামালগঞ্জ, তাহিরপুর, কিশোরগঞ্জ ও নেত্রকোনার নৌপথ পাক দখলমুক্ত রাখার যুদ্ধে অবতীর্ণ হয় জ্যোতির দাসপার্টি। ভাটির জনপদে শত্রুদের ভীত কাঁপিয়ে দেন জগৎজ্যোতি। দাস পার্টির মূহুর্মূহ আক্রমনে দিশেহারা হয়ে পাকিস্তান সরকার রেডিওতে ঘোষণা দিতে বাধ্য হয়, এই রুট দিয়ে চলাচলকারী ব্যক্তিদের জানমালের দায়িত্ব সরকার নেবে না।
মাত্র ১৩ জন মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে বানিয়াচংয়ে প্রায় ২৫০ পাক বাহিনী ও তাদের দোসরদের ঠেকিয়ে দেন জ্যোতি। এ লড়াইয়ে প্রাণ হারায় শত্রু পরে ৩৫ সদস্য। পাকিস্তানিদের গানবোট ধ্বংস করে দেন জগৎজ্যোতিরা। ১৭ আগস্ট পাহাড়পুড়ে জগৎজ্যোতির বুদ্ধিমুত্তা ও বীরত্বে রক্ষা পায় অসংখ্য নিরীহ বাঙালির প্রাণ ও নারীর সম্ভ্রব। এখানেও পিছু হটে পাকিস্তানীরা। এরপর একের পর এক যুদ্ধজয়ী অভিযান চলতে থাকে জগৎজ্যোতির নেতৃত্বাধীন দাস পার্টির।


যুদ্ধের ময়দানে জগৎজ্যোতি
জগৎজ্যোতি একদম একা হাতে একটা এলএমজি নিয়ে দখল করে নেন জামালগঞ্জ থানা ভবন। সেখানে আস্তানা গেড়েছিলো রাজাকাররা। এরপর জামালগঞ্জ মুক্ত করার অভিযানে রাখেন গুরুত্বপূর্ন ভুমিকা। এ সম্মুখযুদ্ধে শহীদ হন জগৎজ্যোতির সহযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম। মাত্র ১০/১২ জন মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে শ্রীপুর শত্রুমুক্ত করেন জগৎজ্যোতি। খালিয়াজুড়ি থানায় ধ্বংস করে দেন শত্রুপরে বার্জ। আগস্ট মাসে দিরাই-শাল্লায় অভিযান চালিয়ে কোনরূপ গুলি ব্যয় না করেই কৌশলে আটক করেন ১০ জন রাজাকারের একটি দলকে। যারা এলাকায় বেপোরোয়াভাবে খুন, ধর্ষণ ও লুটপাট চালাচ্ছিলো। রানীগঞ্জ ও কাদিরীগঞ্জে অভিযান চালিয়েও জ্যোতি আটক করেন রাজাকারদের। জগৎজ্যোতি তখন মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে এক কিংবদন্তির নাম। সাহস ও অনুপ্রেরণার উৎস।


চক্রব্যুহে অভিমন্যু
১৬ নভেম্বর ভোরের সূর্য ওঠার সাথে সাথেই দাস পার্টির ৪২ সদস্য নিয়ে নৌকাযোগে বাহুবল অভিযানে রওয়ানা দেন জগৎজ্যোতি। ল্ক্ষ্যস্থলে যাওয়ার পূর্বেই বদলপুর নামক স্থানে হানাদারদের পাতা ফাঁদে পা আটকে ফেলেন জগৎজ্যোতি। বদলপুরে পৌঁছামাত্রই জগৎজ্যোতি দেখতে পান ৩/৪ জন রাজাকার ব্যবসায়ীদের নৌকা আটক করে চাঁদা আদায় করছে। ক্ষুব্ধ জ্যোতি রাজাকারদের ধরে আনার নির্দেশ দেন। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধাদের দেখেই পিছু হঠতে থাকে রাজাকাররা। এতে আরো ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন জ্যোতি। ১০/১২ জন মুক্তিযোদ্ধা আর সামান্য গোলাবারুদ নিয়ে তাড়া করেন রাজাকারদের। অথচ কুচক্রীরা পাকসেনাদের বিশাল বহর আর প্রচুর সংখ্যক গোলাবারুদ নিয়ে একটু দূরেই ঘাপটি মেরে ছিলো। শুরু হয় এক জ্যোতির সীমিত গোলাবারুদের সাথে পাকবাহিনীর বিশাল অস্ত্রভান্ডারের এক অসমযুদ্ধ। এক পর্যায়ে গোলাবারুদ কমে আসায় বেকায়দায় পড়ে যায় দাস পার্টি। সঙ্গীদের জীবন বাঁচাতে স্থান ত্যাগের নির্দেশ দেন জ্যোতি। সহযোদ্ধাদের পালানোর সুযোগ করে দিয়ে মরনপন লড়াই চালিয়ে যান জগৎজ্যোতি ও তার সহযোদ্ধা ইলিয়াস। হঠাৎ করে ইলিয়াসও গুলিবিদ্ধ হন। নিজের মাথার গামছা খুলে জ্যাতি ভালো করে বেঁধে রক্তপড়া বন্ধ করেন ইলিয়াসের। ইলিয়াস পালানোর প্রস্তাব দেন। গর্জে ওঠে জগৎজ্যোতির বীরকন্ঠ।
তেজোদীপ্ত সুরে বলেন- ‘পালাবো না, সবকটাকে শেষ করে তবে যাবো।’ একাই ১২ জন পাকসেনাকে খতম করে দেন জ্যোতি। বিকেল পৌনে পাঁচটা। জ্যোতির অস্ত্রভান্ডার শূন্য। তবু পিছু ফিরছেন না। এমন সময় আচমকা একটা বুলেট বিদ্ধ হয় জ্যোতির শরীরে। জগৎজ্যোতি শেষবারের মতো চিৎকার করে ওঠেন- ‘আমি যাইগ্যা’।


মৃত জগৎজ্যোতিতেও ভীত রাজাকারেরা
জগৎজ্যোতির নিথর দেহকেও রেহাই দেয়নি পাক হায়েনাদের দোসররা। আজিমিরিগঞ্জ বাজারে যেদিন জ্যোতির লাশ আনা হয় সেদিন ছিলো ঈদের বাজার। বীর সেনার লাশ দেখতে শত শত লোক জড়ো হন বাজারে। মুক্তিযোদ্ধার পরিণতি দেখানোর জন্য জ্যোতির নিথর দেহ রাজাকাররা বেঁধে ফেলে ইলেকট্রিক খুঁটির সাথে। ধারালো অস্ত্র দিয়ে খুঁচাতে থাকে জ্যোতির শরীর। তবিত করার পর বিবস্ত্র করা হয় এই প্রয়াত সেনাপতিকে। সদলবলে জ্যোতির গায়ে থু থু ফেলে রাজাকারের দল। এই বিভৎসতার স্মৃতি ধরে রাখতে এক দালালকে দিয়ে সেই ছবিও তুলানো হয়।
এইখানেই থামে না রাজাকাররা। জগৎজ্যোতির মা-বাবাকে নিয়ে জ্যোতির বিভৎস লাশ দেখিয়ে তারা বিকৃত আনন্দ উপভোগ করে। লাশ নিয়ে যখন পুরো পরিবারে কান্নার রোল উঠেছে তখন রাজাকারেরা আগুন ধরিয়ে দেয় জগৎজ্যোতিদের বসত ভিটায়। এরপর জগৎজ্যোতিকে ভাসিয়ে দেয়া হয় ভেড়ামোহনা নদীর জলে। এভাবেই ঘটে দেশ মাতৃকার শ্রেষ্ঠতম সন্তানটির ভাসানযাত্রা।


সর্বোচ্চ খেতাবের ঘোষণা
যুদ্ধ ক্ষেত্রে জ্যোতির শহীদ হবার সংবাদ স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র, অল ইন্ডিয়া রেডিওসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচারিত ও প্রকাশিত হয়। সেই সাথে তার বীরত্বগাঁথা তুলে ধরা হয় বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে। অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকার তাকে সর্বোচ্চ মরণোত্তর পদক প্রদানের ঘোষণা করেন। প্রথম ব্যক্তি হিসেবে জগৎজ্যোতিকে মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পদক প্রদানের ঘোষণা সে সময় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে প্রচারিত হয়। এই ঘোষণায় অনেক মুক্তিযোদ্ধাই উদ্‌ভুদ্ধ হয়েছিলেন, সাধুবাদ জানিয়েছিলেন সরকারকে।
জগৎজ্যোতিকে মরনোত্তর সর্বোচ্চ পদক প্রদানের ঘোষণা দিয়েও সে প্রতিশ্রুতি থেকে অজ্ঞাত কারণে সরে আসে সরকার। পরবর্তীতে ১৯৭২ সালে বীরবিক্রম খেতাবে ভূষিত করা হয় তাকে। এই পুরস্কারও বাস্তবে প্রদান করা হয় আরো দু’যুগ পর। কেন ঘোষনা দিয়েও জগৎজ্যোতিকে প্রদান করা হলো না মরনোত্তর সর্বোচ্চ খেতাব- এই প্রশ্নের উত্তর আজো অজ্ঞাত। জগৎজ্যোতির সহযোদ্ধা আর মুক্তিযোদ্ধাদের গবেষকরাও আজও খুঁজে বেড়ান এই প্রশ্নের উত্তর। তাদের নানা লেখায় প্রকাশ পেয়েছে এ নিয়ে ক্ষুভ।
মুক্তিযোদ্ধা, সাংবাদিক সালেহ চৌধুরী ‘একাত্তরের দিরাই-শাল্লা’ প্রবন্ধে লিখেছেন- ‘জগৎজ্যোতির প্রতি বাংলাদেশ সরকার তার প্রতিশ্রুতি রাখেনি। ··· স্বাধীনতার পর সরকার জ্যোতিকে সর্বোচ্চ খেতাব দেয়নি, সর্বোচ্চ খেতাব মুক্তিযুদ্ধের একটি বিশেষ অংশের জন্য সীমাবদ্ধ রয়ে গেলো। সরাসরি সশস্ত্রবাহিনীর না হলে সর্বোচ্চ খেতাব দেয়া যাবে না। অতএব জগৎজ্যোতিও বাদ। ওতে কিছু যায় আসেনি। জ্যোতিরও কোন ক্ষতি হয়নি। স্বাধীনতার জন্য জীবন উৎসর্গকারী জগৎজ্যোতিরা অমর। তাদের কীর্তি অয় অবিস্মরণীয়।’


শহীদের তালিকায়ও নেই জ্যোতির নাম
স্বাধীনতার পর আজমিরিগঞ্জ উপজেলার নাম জগৎজ্যোতিগঞ্জ করার প্রস্তাব দেন স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা। পরবর্তীতে স্বাধীনতা বিরোধীদের বিরোধীতায় তা সম্ভব হয় নি। যদিও সুনামগঞ্জের পৌর পাঠাগারের নাম রাখা হয় জগৎজ্যোতি পৌর পাঠাগার নামে। তবে জগৎজ্যোতির নিজ জেলা হবিগঞ্জের স্মৃতিস্তম্ভে শহীদদের তালিকায়ও নাম নেই জগৎজ্যোতির। তাতে অবশ্য কিছু আসে যায় না জগৎজ্যোতির পরিবারের। যাদের নিজেদের থাকারই জায়গা নেই, খাওয়ার নিশ্চয়তা নেই- কার কোথায় নাম আছে তা নিয়ে ভাবার সময় কই এদের! জগৎজ্যোতির পিতা মাতা গত হয়েছেন। বড় ভাইও স্বর্গবাসী। এখন কেবল বৌদি আর ভাতুস্পুত্ররা আছেন। শহীদ জগৎজ্যোতি দাসের ভাতুস্পুত্র দুলালচন্দ্র দাস বলেন, জাতীয়ভাবে যেমন জগৎজ্যোতি দাসের সঠিক মূল্যায়ন করা হয়নি। তেমনি স্থানীয় ভাবেও তার মূল্যায়ন কেউ করেনি। তিনি বলেন, গত আ’লীগ শাসনামলে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত হবিগঞ্জে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যদের জন্য বরাদ্দকৃত জায়গায় আমাদের পরিবারকে বসবাসের জন্য একখন্ড জমি দেয়ার অঙ্গিকার করলেও তা আজও বাস্তবায়িত হয়নি।


অনন্য মুক্তিযোদ্ধা জগৎজ্যোতি
শহীদ জগৎজ্যোতির অমর বীরত্বগাথা আর বঞ্চনার কাহিনী নিয়ে এবারের বই মেলায় প্রকাশিত হয়েছে ‘অনন্য মুক্তিযোদ্ধা জগৎজ্যোতি’ বইটি। বইটি লিখেছেন সাংবাদিক অপূর্ব শর্মা। সাহিত্য প্রকাশ থেকে প্রকাশিত হয়েছে এটি। জগৎজ্যোতিকে নিয়ে বইটি লেখা হলেও আবশ্যিকভাবে ওঠে এসেছে সিলেট অঞ্চলের যুদ্ধদিনের কাহিনী। বীর সেনাদের বীরত্বগাঁথা আর রাজাকারদের পৈশাচিকতার গল্প। ইতিহাসধর্মী বইগুলোর চাইতে এই বইটির ব্যতিক্রম হলো ‘অনন্য মুক্তিযোদ্ধা জগৎজ্যোতি’ বইটি সুখপাঠ্য ও প্রাঞ্জল। এই প্রতিবেদনের তথ্যগুলো অপূর্ব শর্মা’র অনন্য মুক্তিযোদ্ধা জগৎজ্যোতি বইটি থেকে সংগৃহীত।



সংশপ্তক মুক্তিযোদ্ধা জগৎজ্যোতি আমাদের ক্ষমা করুন!
বীরশ্রেষ্ঠ নিয়েও চলেছে প্রতিশ্রুতিভঙ্গের খেলা
তর্পন


ভাস্কর চৌধুরীর লেখাটি পড়ে জগৎজ্যোতির সম্মন্ধে জানতে আগ্রহী হয়ে উঠি। বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছিল যে আমাদের বীরশ্রেষ্ঠ উপাধী থেকে প্রতিশ্রুতিভঙ্গ শুরু। স্বাধীন বাংলা বেতারে প্রচারিত প্রতিশ্রুতিতে এই মুক্তিযোদ্ধাকে বীর শ্রেষ্ঠ ঘোষণার কথা বার বার বলা হলেও মাত্র কয়েক মাস পরে '৭২ এর ৬ এপ্রিল প্রথম গেজেটে একমাত্র বীরশ্রেষ্ঠ উপাধী পায় মুন্সী আবদুর রউফ । বলাবাহুল্য ৩ জনকে বীরউত্তম, ১৪ জনকে বীরবিক্রম এবং ২৫ জনকে বীরপ্রতীক হিসেবে ঘোষণা দেয়া হলেও জগৎজ্যোতির দুরের কথা কোন গণ মুক্তিবাহিনীর যোদ্ধা এতে ছিল না । কেন? তবে কী এখানে অলিখিত বিধান ছিল যে জগৎজ্যোতির মত গণবাহিনীর সংশপ্তক যোদ্ধারা যতই বীরত্ব প্রদর্শণ করুক তাদের জন্য রাষ্ট্রীয় উপাধী প্রযোজ্য নয়? পরবর্তীতে ১৯৭৩ সালের ৬ ডিসেম্বর ৬ জন বীরশ্রেষ্ঠের নাম যুক্ত হয়। দেখা যায় জিয়া সহ সর্বমোট ৬৮ জন বীরউত্তম খেতাব পায় । কাদের সিদ্দিকী সহ মাত্র ২ জন আসে গণবাহিনী থেকে! (সুত্র: বীরশ্রেষ্ঠ , বীরউত্তমবীরবিক্রম , এবং বীরপ্রতীক দের তালিকা)।

জগৎজ্যোতি কে বীরশ্রেষ্ট উপাধি দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সংগঠক বেলাল মোহাম্মদ জানান, শহীদ জগৎজ্যোতিকে বীরশ্রেষ্ট খেতাব দেওয়ার ঘোষনা দেওয়া হয়েছিল একাধিকবার এবং তার বীরত্বগাথা প্রচার হচ্ছিল সম্মানের সঙ্গে। জাতির অস্তিত্ব রক্ষার এই যুদ্ধে জগৎজ্যোতির প্রত্যুতপন্নমতিত্ব, প্রাকৃতিকভাবে যোগাযোগ বিচ্ছন্ন দায়িত্বরত এলাকায় নতুন নতুন রণকৌশল ও দুঃসাহসী সফল অপারেশনের কারণে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে একাধিকবার তার বীরত্বগাঁথা প্রচার হচ্ছিল সম্মানের সঙ্গে। আর একারণে তার প্রতি চরম ক্ষুদ্ধ ছিল পাক হায়েনারা।

জগৎজ্যোতি দাস বীরবিক্রম
’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে ভাটি বাংলার গেরিলা বাহিনীর কমান্ডার ছিলেন শহীদ মুক্তিযোদ্ধা জগৎজ্যোতি দাস। বাবা মা আদর করে ডাকতেন শ্যাম নামে। যদিও কোন কোন তথ্যে সে কোন উপাধি পায় নি কিন্তু বীর বিক্রমদের তালিকা অনুযায়ী সেক্টর ৫ থেকে তাকে বীরবিক্রম উপাধী দেয়া হয় ।

কমিউনিষ্ট আদর্শে দিক্ষিত হলেন
হবিগঞ্জ জেলার আজমিরীগঞ্জ উপজেলার জলসুখা গ্রামের জীতেন্দ্র দাসের কনিষ্ঠ পুত্র জগৎজ্যোতি। শৈশব থেকে জ্যোতি শান্ত স্বভাবে হলেও ছিলেন প্রতিবাদী, জেদি, মেধাবী ও সাহসী । স্কুল জীবনেই জ্যোতি আইয়ুববিরোধী আন্দোলনে অংশ নেন। ১৯৬৮ সালে ম্যাট্রিক পাস করার পর সুনামগঞ্জ কলেজে ভর্তি হয়ে ছাত্র ইউনিয়নে যোগ দেন এবং তেজোদীপ্ত, বিপ্লবী ও স্পষ্টভাষী ছাত্র নেতা হিসেবে তিনি পরিচিত হয়ে ওঠেন । ১৯৬৯ সালে আইয়ুব বিরোধী আন্দোলনে অংশ নিয়ে বিশেষ দায়িত্ব পালনে ভারতের গৌহাটির নওপং কলেজে ভর্তি হন। সেখানে অবস্থানকালে অনেকগুলো অঞ্চলের ভাষা আয়ত্ব করেন এবং ধীরে ধীরে নকশাল পন্থীদের সঙ্গে জড়িত হন। এখানে অস্ত্র গোলাবারুদ সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারনা নিয়ে আবার দেশে ফিরে আসেন।

যুদ্ধ শুরু হলো
’৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে যখন সশস্ত্র সংগ্রাম শুরু হয় । পাকবাহিনীর বর্বরোচিত হামলা ও নৃশংস হত্যাকান্ডের বিরুদ্ধে রূখে দাড়ানোর জন্য সিদ্ধান্ত নেন জগৎজ্যোতি । যোগ দেন ভারতের মেঘালয় রাজ্যের ইকো-১ ট্রেনিং ক্যাম্পে। বাংলার ভাটি অঞ্চলের সুনামগঞ্জ-কিশোরগঞ্জ-নেত্রকোনা এবং হবিগঞ্জের হাওরাঞ্চল নিয়ে গঠিত হয় মুক্তিযুদ্ধের ৭ নং সেক্টর। এ সেক্টরের কমান্ডারের দায়্ত্বি পান তৎকালীন মেজর শওকত আলী। ৭ নং সেক্টরকে কয়েকটি সাব-সেক্টরে বিভক্ত করা হয়। এর মধ্যে টেকেরঘাট সাব-সেক্টরের দায়্ত্বি দেওয়া হয় বর্তমান বিশিষ্ট নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্তকে। তার অধীনেই প্রথমত জগৎজ্যোতি বিভিন্ন আক্রমণে অংশগ্রহণ করেন। তার নেতৃত্বে প্রশিক্ষিত চৌকস যোদ্ধাদের নিয়ে গঠিত হয় গেরিলা দল, যার নাম দেওয়া হয় ফায়ারিং স্ট্কোয়াড ‘দাস পার্টি’।

কয়েকটি সফল অপারেশন
জগৎজ্যোতি ইংরেজি, হিন্দি, গৌহাটির আঞ্চলিক ভাষায় পারদর্শী হওয়ার সুবাদে ভারতীয় মিত্র বাহিনীর সঙ্গে তার যোগাযোগ সহজতর হয় । এর ফলে দাস পার্টির জন্য ভারতীয় মিত্র বাহিনীর জগৎজ্যোতি আধুনিক অস্ত্র ও গোলাবারুদ সংগ্রহে সমর্থ হন । দাস পার্টির উল্লেখযোগ্য একটি অপারেশন ছিল পাকবাহিনীর বার্জ আক্রমণ । ’৭১-এর ১৬ অক্টোবর পাকবাহিনীর সেই বার্জটিতে আক্রমণ চালিয়ে বার্জটি নিমজ্জিত করে। দাস বাহিনীর গেরিলা অভিযানের মাধ্যমে পাকিস্তানী শত্রু ঘাঁটি ধ্বংস শুরু করে। পরবর্তীতে পাহাড়পুর অপারেশন, বানিয়াচংয়ে কার্গো বিধ্বস্ত করা, বানিয়াচং থানা অপারেশনসহ বেশ ক’টি ছোট বড় অপারেশন দাস পার্টির যোদ্ধারা সফল ভাবে সম্পন্ন করে।

বদলপুর অপারেশন
বদলপুর অপারেশন ছিল মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে একটি একটি বিশাল সাফল্য । জগৎজ্যোতির সঙ্গে ছিল বানিয়াচংয়ের মোহাম্মদ আলী মমিন, আমির হোসেন, খালেক মাস্টার, হায়দারুজ্জামান খান ধন মিয়া, আজমিরীগঞ্জের রাশিদুল হাসান চৌধুরী কাজল, মতিউর রহমান, নিত্যানন্দ দাস, ইলিয়াছ চৌধুরী, আঃ রশীদ, নিপেন্দ্র দাশ, ছাতকের আয়ুব আলী, আঃ মজিদ ও দিরাই উপজেলার আহবাব হোসেন এবং নীলু। জগৎজ্যোতির দল আজিমিরীগঞ্জ, মারকুলি, গুঙ্গিয়ারগাঁও প্রভৃতি অঞ্চলে শত্রু ঘাঁটি ধ্বংস করে দেয়। বদলপুরে শত্রুসেনারা দাস পার্টির প্রতিরোধের মুখে পাকসেনারা শক্তি বৃদ্ধি করতে বাধ্য হয়। গুলি ছোড়ার জন্য হেলিকপ্টারও ব্যবহার করা হয় । রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে জগৎজ্যোতি র পাশে ছিল ইলিয়াস নামে আরেকজন অসীম সাহসী যোদ্ধা।

শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত লড়ে গেলেন
পাক ক্যাম্প থেকে মাত্র ২০০ গজ দুরে রাজাকার/পাক সেনাদের আক্রমণে ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ে দাস পার্টি। রণাঙ্গণে পরিস্হিতির ভয়াবহ চিন্তা করে এক পর্যায়ে জ্যোতি তার দলকে ফিরে যাবার নির্দেশ দিয়ে একটি মাত্র এলএমজি নিয়ে নিজে একাই যুদ্ধ চালিয়ে যাবার সিদ্ধান্ত নেন । এজন্য জ্যোতি সহযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী মমিনকে নির্দেশ দেন যাতে অন্যরা তাদের জীবন বাঁচিয়ে নিরাপদ স্হানে সরে যায় । এরপর দল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে থাকেন মাত্র দুইজন, জ্যোতি ও ইলিয়াছ। সুস্হির এবং দৃঢ় মনোবলের সঙ্গে তারা যুদ্ধ করতে থাকে একটানা কিন্তু হঠাৎ ইলিছাস পাঁজরে গুলিবিদ্ধ হন। জ্যোতি পিছু না হটে তার মাথার লাল পাগড়ি খুলে শক্ত করে ইলিয়াসের বুকে‌ এবং পিঠে বেঁধে দেয়, যাতে তার রক্তক্ষরণ থেকে যায়। ইলিয়াছ সেই অবস্হায় মেশিনগান নিয়ে ক্রমাগত গুলি ছুড়তে থাকে পাক হানাদারদের ওপর।

অবিশ্বাস্য হলেও তিন দিক থেকে আক্রমণ সত্ত্বেও দক্ষ যোদ্ধা জ্যোতির কাছে ভিড়তে পারেনি পাকসেনারা। যুদ্ধের এক পর্যায়ে ম্যাগজিন লোড করে শত্রুর অবস্থান দেখতে মাথা উঁচু করতে মুহুর্তে ১টি গুলি জগৎজ্যোতির চোখে বিদ্ধ করে( একটু সুত্র দাবী করে তার পাঁজর বিদ্ধ করে)। মেশিনগান হাতে উপুড় হয়ে পাশের বিলের পানিতে নিশ্চল হয়ে ঢলে পড়েন জ্যোতি ।

জনসমক্ষে ঝুলিয়ে রাখা হলো
রাজাকারেরা রাতে জ্যোতির মৃতদেহ (একটি সুত্রে বলা হয় তিনি তখনও বেঁচে ছিলেন) খুজে পেয়ে পাকবাহিনীকে খবর দেয় । তাকে আজমিরীগঞ্জ বাজারে নিয়ে যায়। রাজাকাররা জ্যোতি হত্যার ঘটনা ছড়িয়ে দিয়ে সাধারণ মানুষকে ভয় দেখানোর জন্য তার দেহ কে আজমিরীগঞ্জ গরুর হাটে একটি খুঁটির সঙ্গে ঝুলিয়ে দেয়া হয়। তারপর চলে মৃতদেহ অবমাননা । একটি সুত্র দাবী করে জ্যোতি তখনও জীবিত ছিল এবং তাকে অমানুষিক নির্যাতন করে মেরে ফেলা হয় । হাফপ্যান্ট ও গেঞ্জি পরা জ্যোতির নিথর দেহটি কোন সৎকার ছাড়া ঝুলিয়ে রেখে পরে একসময় ভাসিয়ে দেওয়া হয় কুশিয়ারা নদীতে। কিন্ত্ত তার সহযোদ্ধারা তার মৃত্যুতে পিছু হটেনি । জগৎজ্যোতি ছিল তাদের কাছে জীবনের বিনিময়ে দেশের জন্য যুদ্ধ করার এক অনন্য দৃষ্টান্ত । জগৎজ্যোতির বীরত্বপূর্ণ যুদ্ধের কাহিনী সিলেটের সেই অঞ্চলের মানুষের কাছে এখনে মুখে মুখে ফেরে ।

বিস্মৃতির অতলে জগৎজ্যোতি
ছিটে ফোটা দু একটি লেখা ছাড়া খুব কমই আলোচনায় এসেছে এই মহান বীর । মইদুল হাসানের "মূলধারা একাত্তরে" পড়েছিলাম আওয়ামীলীগের একটি অংশ ছাত্রইউনিয়ন সহ দলের বাইরের কোন মুক্তিযোদ্ধাদের স্বীকৃতির পক্ষে ছিল না ।

জগৎজ্যোতির কমান্ডার সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত দেশের ক্ষমতাশীল দলের কান্ডারীদের একজন হয়ে তার ভাগ্য বদলেছেন । চ্যানেল আইতে তৃতীয় মাত্রা সহ একাধিক টিভি অনুষ্ঠানে তাকে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণ করতে দেখেছি ।কিন্তু এই যোদ্ধার নাম ভুলেও বলতে দেখিনি । হয়তো পুরনো কাহিনী বলে সবাই ভুলে গেছে ।


সূত্র:

ক. ভাটিবাংলায় মুক্তিযুদ্ধ এবং দাস পার্টি , রাশেদ আহমেদ খান, দৈনিক সমকাল, ৮ ডিসেম্বর ২০০৬।
খ. মুক্তিযুদ্ধে সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজের শহীদ তিন ছাত্র মুক্তিযোদ্ধা জগৎজ্যোতিদাস, তালেব ও গিয়াস

Monday, April 6, 2009

ইমন জুবায়ের ; একটি হত্যাকান্ডের পটভূমি

ইমন জুবায়ের

একটি হত্যাকান্ডের পটভূমি


এই আধুনিক সময়েও মধ্যযুগীয় পুরনো শাস্ত্র আর তার রচয়িতাদের বিরুদ্ধে কিছু বলা যাবে না; বললে- মৃত্যু অনিবার্য। তেমনি একটি মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে গেল ২০০৪ সালে। হল্যান্ডে। মরক্কোর এক ধর্মান্ধ জঙ্গি নির্মম ভাবে খুন করে বসল নেদারল্যান্ডের একজন মুক্তমনা চলচ্চিত্র নির্মাতাকে। আবারও প্রকাশ পেল ধর্মান্ধতার বিভৎস রুপ। চমকে উঠল সমগ্র পশ্চিমাবিশ্ব। সমগ্র পশ্চিমাবিশ্ব আবারও পরম অবিশ্বাসের চোখে মুসলিমবিশ্বের দিকে তাকাল- যা ভবিষ্যৎ সর্ম্পকের ক্ষেত্রে শুভ পরিনতি বয়ে আনবে না বলেই মনে হল ...

সোমালিয় নারী আইয়ান হিরসি আলীর জন্ম ১৩ নভেম্বর ১৯৬৯ সালে সোমালিয়ার রাজধানী মোগাডিসুতে। আইয়ান হিরসি আলীর বাবা হিরসি মাগান ইসে ছিলেন রাজনীতিবিদ ও পন্ডিত। মাত্র ৫ বছর বয়েসে আইয়ান হিরসি আলীকে ‘খৎনা’-র ভয়াবহ অভিজ্ঞতার সম্মূখীন হতে হয়। নারীর খৎনাকে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় Clitorectomyবলা হয়। অহেতুক যন্ত্রণাদায়ক এই ঘৃন্য প্রথাটি আফ্রিকাসহ আরববিশ্বের অনেক নারীর জীবনকে করে তোলে বিষময়। হিরসি মাগান ইসে-র অবশ্য তাঁর মেয়ের Clitorectomy করার ব্যাপারে অমত ছিল। তবে তিনি তখন জেলে ছিলেন বলে তিনি ঐ ‘অপকর্মে’ বাধা দিতে পারেননি।
আইয়ান হিরসি আলীর ৮ বছর বয়েসে তার পরিবার চলে আসে সৌদি আরব; সেখান থেকে ইথিওপিয়া। পরে পরিবারটি সেটল করে কেনিয়ায়। নাইরোবির মুসলিম গালর্স সেকেন্ডারি স্কুলে ভর্তি হয়ে ইংরেজি শেখে আইয়ান হিরসি আলী। তবে, মেয়েবেলা থেকেই ইসলাম ধর্মে শিক্ষা হয়েছিল। পড়তে হত কোরান।
কেনিয়ার শিক্ষাব্যবস্থায় প্রচুর অর্থ ঢালে সৌদি আরব । ফলে, আইয়ান হিরসি আলী কট্টর ওয়াহাবী শিক্ষা পেয়েছিল। স্কুলের ইউনিফর্মের সঙ্গে পরতে হত হিজাব । ওয়াহাবী শিক্ষার তুলনায় সোমালিয়া ও কেনিয়ার ইসলাম ছিল অনেকটা সহনশীল হলেও ওয়াহাবীপন্থি শিক্ষকদের প্ররোচনায় মিশরের কুখ্যাত জঙ্গি সংগঠন মুসলিম ব্রাদারহুডের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে ওঠে আইয়ান হিরসি আলী । মুসলিম আলেমরা ব্রিটিশ লেখক সালমান রুশদীর বিরুদ্ধে ফতোয়া দিলে আইয়ান হিরসি আলী সমর্থন জানায়।
মেয়েবেলা থেকেই বই পড়তে ভালো লাগত আইয়ান হিরসি আলীর। কেনিয়ায় থাকাকালে প্রচুর ধর্মনিরপেক্ষ বই পড়ার সুযোগ হল। এভাবে মনের গড়ন বদলে যাচ্ছিল মেয়েটির।
কিছু সংশয় তৈরি হচ্ছিল।



১৯৯২ সাল। আইয়ান হিরসি আলীর বাবা তার মেয়ের বিয়ে ঠিক করে। ‘আগন্তুক দ্বারা ধর্ষিতা হব না’-এই শপথ নিয়ে আইয়ান হিরসি আলী বিদেশ পাড়ি জমাবে ভাবল। পলিটিকাল অ্যাসাইলামের অজুহাতে কাগজপত্র সেভাবেই তৈরি করল-করে নেদারল্যান্ডে পৌঁছল। যা হোক, হল্যান্ডে বসবাসের অনুমতি পেল। আমসট্রাডাম শহর। কাজ খুঁজল। অড জব। পেল। ডাচ ভাষা শিখল। ডাচদের সমাজ দেখে মুগ্ধ আইয়ান হিরসি আলী-বিশেষ করে নারীস্বাধীনতার বিষয়টি। সময় পেলেই বই পড়ত। এই প্রথম ফ্রয়েড পড়ে বিস্মিত হল। ধর্ম ব্যতীত যে নৈতিকতা সম্ভব- তা জেনে বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গেল। রাষ্ট্রবিজ্ঞান নিয়ে পড়বে বলে ঠিক করল। ভর্তি হল লেইডেন বিশ্ববিদ্যালয়ে ।
২০০০ অবধি চলল পড়াশোনা।



রাস্ট্রবিজ্ঞানে এম.এ পাস করে আইয়ান হিরসি আলী রাজনীতি করবেন ভাবলেন। যোগ দিলেন একটি মধ্য-বাম শ্রমিক দলে। পড়াশোনা চলছিল। ইসলাধর্মে আর বিশ্বাস ধরে রাখা যাচ্ছিল না। ৯/১১ পর তার ধর্মীয় পরিচয় নিয়ে বিব্রত বোধ করলেন। লাইডেন অধ্যাপক দার্শনিক হেরমান ফিলিপস ‘দি অ্যাথেইস্ট ম্যানিফেস্টো’ নামে একটি ক্ষুদ্র বই লিখেছিলেন। বইটি পড়ে পুরোপুরি অবিশ্বাসী হয়ে গেলেন আইয়ান হিরসি আলী। ২০০২ সালে ইসলাম ত্যাগ করে নিজেকে অ্যাথেইস্ট ভাবতে শুরু করলেন। ইসলামের সমালোচনা করে নিবন্ধ লেখতে শুরু করলেন। সমকাম ও পরকীয়ার ইসলামের ধ্বজাধারীরা যে শাস্তি দেয়-তার কট্টর সমালোচনা করলেন। লিখলেন: ‘৯/১১ এর খুনিদের আর আমার ঈশ্বর এক হতে পারে না।’ ইসলামকে বললেন, পিছিয়ে পড়া ধর্ম-যা কি না গনতন্ত্রের সঙ্গে কমপাটিবল না। তাঁর মতে, ইসলাম হল নয়া ফ্যাসীবাদ। খিলাফত চলে শরিয়া আইনে। যেখানে বিয়ের আগে যৌন সম্পর্ক স্থাপিত হলে পাথর ছুঁড়ে মারা হয়, সমকামীদের মারা হয় বেত -আর অবিশ্বাসীদের করা হয় হত্যা । ইসলাম নাৎসীবাদ না তো কী! আইয়ান হিরসি আলী মেয়েদের Clitorectomy বিরোধী। তাঁর মতে, Clitorectomy যৌনআকাঙ্খা দূর তো করেই না-উপরোন্ত তা হয়ে দাঁড়ায় যন্ত্রণাদায়ক। Clitorectomy করা মেয়েরা জীবনভর যন্ত্রণা সহ্য করে ।
এসব নিয়েই “দি সন ফ্যাক্টরি” নামে বই লিখলেন আইয়ান হিরসি আলী ।
বিপদ ঘনিয়ে এল।
হল্যান্ডের একটি (মুসলিম) জঙ্গি সংগঠনের নাম:হোফসটাড নেটওয়ার্ক। হল্যান্ডে প্রায় ১০ লক্ষ মুসলিম বাস করে। হোফসটাড নেটওয়ার্ক মুসলিম ডাচদের একটি মৌলবাদী যুব সংগঠন। দীর্ঘকাল ধরেই তারা ইউরোপে তাদের (অপ) তৎপরতা চালিয়ে আসছিল। স্পেন ও বেলজিয়ামেও নাকি এদের শাখা আছে। মিশরীয় মুসলিম সংগঠন, ‘তাকফির ওয়াল হিজরার’ আদর্শে হোফসটাড নেটওয়ার্ক-এর সদস্যরা অনুপ্রাণিত।
হোফসটাড নেটওয়ার্ক-এর কাছ থেকেই প্রথম মৃত্যুর হুমকি পেলেন আইয়ান হিরসি আলী। তবে, ঘাবড়ালেন না। লেখা চালিয়ে গেলেন। ইসলাম ধর্মের প্রবর্তকের কঠোর সমালোচনা করে লিখলেন; ইসলাম ধর্মের প্রতিষ্ঠাতা বিকৃতরুচির একজন pedophileছিলেন। pedophile শব্দের অর্থ: An adult who is sexually attracted to children! ৫২ বছর বয়েসে ইসলামের প্রতিষ্ঠাতা ৬ বছরের শিশু আয়েশাকে বিবাহ করেন। আর, বালিকা আয়েশার ৯ বছর বয়েস যৌনমিলন হয়!
হোফসটাড নেটওয়ার্ক-এর সদস্যরা ক্রদ্ধ হয়ে উঠতে থাকে।
ঠিক এই সময়েই থিও ভ্যান গগ-এর সঙ্গে পরিচয় হল তাঁর।


থিও ভ্যান গগ। ওলন্দাজ (ডাচ) চিত্রপরিচালক, প্রয়োজক, কলামিষ্ট, লেখক ও অভিনেতা। বিখ্যাত চিত্রকর ভ্যান গগ এঁরই উর্ধ্বতন পূর্বপুরুষ। আইয়ান হিরসি আলীর লেখা পড়ে চমৎকৃত হয়েছিলেন থিও ভ্যান গগ। তিনি নিজেও শাস্ত্রবিরোধী। আইয়ান হিরসি আলীর দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে একটি ছবি নির্মান করবেন ভাবলেন। আইয়ান হিরসি আলীই চিত্রনাট্য লিখলেন। মাত্র ১০ মিনিটের ছবি। তাতেই যা বলার বলা গেল। থিও ভ্যান গগ নিজেই স্বল্পদৈর্ঘ্যরে চলচ্চিত্রটি প্রযোজনা ও পরিচালনা করলেন। নাম রাখলেন: ‘সাবমিশন।’ থিও ভ্যান গগ তখনও জানতেন না ঘনিয়ে আসছে মৃত্যু। ইসলাম নারীদের কী চোখে দেখে ১০ মিনিটের ছবিতে সে কথাই উঠে এসেছে। দুটো কথা বড় বিপদজনক। (১) অবাধ্য হলে মেয়েদের মারধোর করা যাবে। (২) রাজী না হলে-তারপর যা হবে-তা ধর্ষনেরই শামিল!
মূলত; আত্মসমর্পন আল্লার প্রতি মানুষের নয়-পুরুষের প্রতি নারীর!



‘সাবমিশন’ ছবিটি রিলিজ পায় ২৯ আগস্ট ২০০৪। (আমি সরাসরি ছবিটার লিঙ্ক দিলাম না। Submission লিখে গুগল সার্চ করলে আশা করি ইউ টিউবে ১০ মিনিটের ছবিটি পেয়ে যাবেন। ) ছবিটি রিলিজ পাওয়ার পর হল্যান্ডের মুসলিম কমিউনিটিতে প্রচন্ড বিক্ষোভ দেখা যায়। হোফসটাড নেটওয়ার্কসহ ইউরোপের ইসলামী মৌলবাদী সংগঠনগুলি ফেটে পড়ে তীব্র আক্রোশে। অর্ধনগ্ন অভিনেত্রীর শরীরের পবিত্র কোরানের আয়াত! মোহাম্মদ বোওয়েরি। ২৬ বছর বয়েসি মরক্কোর যুবক; ডাচ নাগরিক। হোফসটাড নেটওয়ার্কের সদস্য। সিদ্ধান্ত নিল-সে থিও ভ্যান গগ এবং আইয়ান হিরসি আলীকে খুন করবে!
আমসট্রাডাম। ২০০৪। নভেম্বর মাসের ২ তারিখ; সকাল। থিও ভ্যান গগ সাইকেল করে যাচ্ছিলেন কাজে। মোহাম্মদ বোওয়েরি কাছ থেকে এইচ এস ২০০০ হ্যান্ডগান দিয়ে আটবার গুলি করে। তক্ষনাৎ মৃত্যু হয় থিও ভ্যান গগ এর। মোহাম্মদ বোওয়েরি তারপর ধারালো ছুড়ি বের করে থিও ভ্যান গগ এর গলা কেটে ফেলে। বুকে তীক্ষ্ম ছোরা দিয়ে ষ্ট্যাব করে। বুকের ওপর মিশরী সংগঠন তাকফির ওয়াল হিজরার রেফারেন্সসমেত একটা নোট গেঁথে দেয়। নোটে পশ্চিমা সরকার ইহুদিবাদ ও আইয়ান হিরসি আলীর ধ্বংস কামনা করা হয়।
পালানোর সময় পুলিশ মোহাম্মদ বোওয়েরি পায়ে গুলি করে।
সে ধরা পড়ে।
তার বিচার হয়।
সে এখন যাবৎজ্জীবন কারাদন্ড ভোগ করছে।
থিও ভ্যান গগ-এর মৃত্যুর পর আইয়ান হিরসি আলী মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়লেও নিজের বিশ্বাস থেকে বিন্দুমাত্র টলে যাননি। নিহত থিও ভ্যান গগ-এর মা পুত্রশোক কাটিয়ে উঠে বললেন: আমি আমার ছেলের আদর্শে বিশ্বাস করি।
বর্তমানে ডাচ সরকারের তত্ত্বাবধানে আইয়ান হিরসি আলী লোকচক্ষুর অন্তরালে আছেন।
এই জন্যই বলছিলাম, এই আধুনিক সময়েও পুরনো শাস্ত্রের বিরুদ্ধে কিছু বলা যাবে না। বললে মৃত্যু অনিবার্য।



অর্থনীতিবিদ আবুল বারকাতের সাম্প্রতিক এক গবেষনায় জানা গেছে বাংলাদেশে বছরে দশ (১০) লক্ষ করে ধর্মান্ধ জঙ্গি বাড়ছে! এদের অর্থায়নের যে টাকা লগ্নি করা হয়েছে তার টার্নওভারের পরিমান দেড় হাজার কোটি টাকার মতন!
হয়তো, থিও ভ্যান গগ এবং আইয়ান হিরসি আলী ‘সাবমিশন’ নির্মান করে বাড়াবাড়ি করেছেন। কিন্তু, একবার ভেবে দেখুন- আমরা টিভিতে রোজ যে নাটক/চলচ্চিত্র দেখছি-যা আমাদের জীবনেরই প্রতিচ্ছবি- সেসবও তো বাংলাদেশি জঙ্গিদের সহ্য হওয়ার কথা না। তার ওপর জঙ্গিদের পিছনে রয়েছে অঢেল অর্থ।
কার্যত, আমরা কেউই নিরাপদ নই।

উৎস:

http://en.wikipedia.org/wiki/Submission_(film)

http://en.wikipedia.org/wiki/Ayaan_Hirsi_Ali

Click This Link)



রোজনামচা বলেছেন:

শয়তানের আওয়াজ বলে সঙ্গীতকে এরা
হারাম করতে চায়-
আমি তাতে দুঃখ পাই।
এবং
‘মধ্যযুগের আফিম’ বলে ধর্ম-কথাকে ওরা
নিষিদ্ধ করতে চায়,
আমি তাতে ক্ষুদ্ধ হই।

দিন রাত মাইকে মাইকে সারা শহরে
গানের যে ঝালাপালা,
ত্যক্ত হয়ে লোকেরাই একদিন গানকে
‘হারাম’ করার ব্যবস্থা করবে,
তাতে এদের উদ্দেশ্য সিদ্ধ হবে-
কিন্তু আমি দুঃখ পাব।

এবং
দিন রাত মাইকে মাইকে সারা শহরে
ধর্ম কথার যে হাঁক-ডাক,
তিক্ত হয়ে লোকেরাই একদিন,
ধর্ম-কথাকে নিষিদ্ধ করবে,
তাতে ওদের উদ্দেশ্য সিদ্ধ হবে-
কিন্তু আমি ক্ষুদ্ধ হব।



আপনার পোস্টটা পড়ে আবারো দু:খ পেলাম, ক্ষুদ্ধ হলাম। ধন্যবাদ আপনাকে।
ইসলামের নাম করে যে নির্যাতন আইয়ান হিরসি আলীদের ওপর হচ্ছে তা তাদের জীবনকে অসহনীয় করে তুলছে। এসব আমাকে ক্ষুদ্ধ করে। কিন্তু যখন দেখি আলী'রাও উল্টো ব্যক্তিগত ক্ষোভ থেকে সামষ্টিকতাকে মোটাদাগে আক্রমন করে অন্ধের মত তখন দু:খ পাই।

অতএব-
লক্ষন যা, তাতে দুঃখ আর ক্ষোভই
আমার কপালের লেখা।

Friday, March 27, 2009

যুক্তি, বিশ্বাস ও ঈশ্বর

কোনো ধর্মকথা শুনতে শুনতে আমি বড় হইনি।
বরং ধর্মের রূপকথা শোনার আগেই আমি পড়েছি শার্লক হোমস, সত্যজিৎ;
ঘুরে বেড়িয়েছি কপোতাক্ষী'র পাড় ধরে, বনে-বাদাড়ে, মাঠে।

আমি অনেক ভাগ্যবান, আমার শৈশব কেটেছে মফস্বলে; টেংরিবাজি করে বেড়িয়েছি ইচ্ছামতো। পিতামাতা কে ধন্যবাদ তারা আমাকে আমার মতো করে বেড়ে ওঠায় কখনো বাধা দেননি আবার উৎসাহ'ও দেননি।

এরপর বাবা'র বদলী হলো মাইজদি তে।
তখন ক্লাস নাইন এ পড়ি।
হাতে এল আরজ আলী মাতুব্বর এর বই।
আমি এখনো মনে করতে পারি সেই দিন......
আমি বলব না ঐ বই এর সব কিছু তখন আমি বুঝেছি।
কিন্তু আমার সবকিছু ওলটপালট হয়ে গেলো।
পরিচয় হলো তুহিন' দার সাথে.......
আমার সংশয়ী হবার প্রথম পাঠ শেষ হলো।
এরপর ভর্তি হলাম যশোর ক্যান্ট কলেজ এ। পরিচয় হলো মামুনের সাথে। একটু অন্যরকম ছেলে কিন্তু পড়ার বাতিক আছে। ওই সন্ধান দিল প্রবীর ঘোষ এর। ১৯৯৬ সাল। উদ্দাম সময়। গান শুনি, হাতের কাছে যা পাই পড়ার চেষ্টা করি; এর মধ্যে দেখলাম মুক্তির গান, চাকা।
যেন অন্যজগতের হাতছানি। সে এক পরিবর্তিত সময়।
সমাজতন্ত্র সম্পর্কে একটু জানাশুনা।
পৃথিবীর ইতিহাস যতই জানতে লাগলাম ততই বিভ্রান্ত হলাম।

আমি পুরোপুরি সংশয়ী হয়ে গেলাম।
বুক ঠেলে শুধু প্রশ্ন আসে; যৌক্তিক উত্তর কেও দেয় না; শুধু লাল দালান দেখানোর মতো "বিশ্বাস" আকড়ে ধরার কথা শুনতে হ্য়।

বিশ্বাস আকড়ে এখনো পথ চলছি তবে তা যুক্তির, মানবতার।

Thursday, March 26, 2009

Movie "Before Sunrise"

Before Sunrise

I just watched this movie last night and it just overwhelmed me.
If you get time watch it.

Directed by Richard Linklater

Produced by Anne Walker-McBay

Written by Richard Linklater
Kim Krizan

Starring Ethan Hawke
Julie Delpy

Release date(s) January 27, 1995

Running time 105 minutes

Language English

Plot

The film starts with Jesse meeting Céline on a train to Paris and striking up a conversation with her. Jesse is going to Vienna to catch a flight back to the United States, whereas Céline is returning to university in Paris after visiting her grandmother in Budapest.

When they reach Vienna, Jesse convinces Céline to disembark with him, saying that 10 or 20 years down the road, she might not be happy with her marriage and might wonder how her life would have been different if she had picked another guy, and this is a chance to realize that he himself is not that different from the rest. In his words, he is "the same boring, unmotivated guy." Jesse has to catch a flight early in the morning and does not have enough money to rent a room for the night, so they decide to roam around in Vienna.

After visiting a few landmarks in Vienna, they share a kiss at the top of the Riesenrad ferris wheel at sunset and start to feel a romantic connection. As they continue to roam around the city, they begin to talk more openly with each other, with conversations ranging from topics about love, life, religion, and their observations of the city.

Jesse reveals he had initially come to Europe to spend time with his girlfriend who was studying in Madrid, but they had broken up when she was avoiding him while he was there. He decided to take a cheap flight out of Europe, out of Vienna, but it didn't leave for two weeks so he bought a Eurail pass and traveled around Europe.

When they are walking alongside a canal they are approached by a man who, instead of begging, offers to write them a poem with a word of their choice in it. Jesse and Céline decide on the word "milkshake", and are soon presented with the poem Delusion Angel (written for the film by the poet David Jewell).

In a cafe, Jesse and Céline stage fake phone conversations with each other, playing each others' friends they pretend to call. Céline reveals that she was ready to get off the train with Jesse before he convinced her. Jesse reveals that after he broke up with his girlfriend, he bought a flight that really wasn't much cheaper, and all he really wanted was an escape from his life.

They admit their attraction to each other and how the night has made them feel, though they understand that they probably won't see each other again when they leave. They simply decide to make the best of what time they have left, ending the night with the implication of sexual encounter between them. At that point, Jesse explains that if given the choice, he'd marry her instead of never seeing her again. The film ends the next day at the train station, where the two hastily agree to meet together at the same place in six months as the train is about to leave.

Sunday, March 22, 2009

এস.এম.এস করুন সম্পূর্ণ ফ্রি!

প্রিয়জনকে এস,এম,এস করুন সম্পূর্ণ ফ্রি!

প্রতিদিন পাচটি করে এস.এম.এস করুন বিশ্বের যে কোন দেশে, যে কোন অপারেটরে।

এস.এম.এস করার জন্য ভিজিট করুন

http://rcs-sms.tk/

এটা একটা ডেমু সাইট। যদি রেসপন্স ভাল পাই তাহেল িকনব। না হেল বাদ। আর সাইটটা এখন ৩১ শে মার্চ না ৩০ শে জুন বন্ধ হেব যিদ রেসপন্স ভাল না পায়।

এস.এম.এস পাঠােনার িনয়ম-
১) নাম্বার বক্সে দেশের কোড + মোবাইল নং লিখুন (০০৮৮০১২৩৪৫৬৭৮৯০)
২) মেসেজ বক্সে মেসেজ লিখুন।
৩) সেন্ড বাটনে ক্লিক করুন।
৪) সিকিউরিটি কোডের জন্য অপেক্ষা করুন।
৫) সিকিউরিটি কোড আসলে তা নিচেরবক্সে লিখুন।
৬) হাত চিহ্নিত বিজ্ঞাপনে ক্লিক করুন

বাংলা বই ডাউনলোড করুন অনলাইন থেকে

আমরা বই কিনে থাকি। কিন্তু অনলাইন থেকে যদি বাংলা বই পাই তাহলে খুব ভালহয় তাই না? নিচের লিঙ্ক গুলি তে ক্লিক করুন এবং উপভোগ করুন বাংলা বই।

http://doridro.com/forum/viewtopic.php?f=87&t=2291

www.banglabook.com

www.banglakitab.com

www.free.com.bd

hhttp://www.rahi4u.com/Boi-PustoK

http://boi-mela.com/BookList.asp?Cost=Free

http://www.arshi.org/

http://www.banglabook.com/

http://www.murchona.com/zone/viewtopic.php?t=5494

তবে এগুলো পরতে আপনার acrobat reader দরকার পরবে। তা ডাউনলোড করতে পারেন নিচের লিঙ্ক থেকে।

www.adobe.com/products/acrobat/readstep2.html

Tuesday, March 17, 2009

বাংলাতে লেখা দেখা যায় কিনা পরিক্ষা করছি।

বাংলাতে লেখা দেখা যায় কিনা পরিক্ষা করছি।

Meg Ryan

Meg Ryan

Meg Ryan is one my very favorite actress.
Here is her movie List

2008 : The Women - DVD/VHS
2008 : The Deal - DVD/VHS
2007 : Homeland Security - DVD/VHS
2007 : The Simpsons (TV Series) - DVD/VHS
2007 : In the Land of Women - DVD/VHS
2003 : Against the Ropes - DVD/VHS
2003 : In the Cut - DVD/VHS
2001 : Kate Leopold - DVD/VHS
2000 : Proof of Life - DVD/VHS
2000 : Hanging Up - DVD/VHS
1998 : You've Got Mail - DVD/VHS
1998 : Hurlyburly - DVD/VHS
1998 : City Of Angels - DVD/VHS
1997 : Anastasia - DVD/VHS
1997 : Addicted to Love - DVD/VHS
1996 : Courage Under Fire - DVD/VHS
1995 : Restoration - DVD/VHS
1995 : French Kiss - DVD/VHS
1994 : I.Q. - DVD/VHS
1994 : When a Man Loves a Woman - DVD/VHS
1993 : Flesh and Bone - DVD/VHS
1993 : Sleepless in Seattle - DVD/VHS
1992 : Prelude to a Kiss - DVD/VHS
1991 : The Doors - DVD/VHS
1990 : Captain Planet and the Planeteers (TV Series) - DVD/VHS
1990 : Joe Versus the Volcano - DVD/VHS
1989 : When Harry Met Sally... - DVD/VHS
1988 : The Presidio - DVD/VHS
1988 : D.O.A. - DVD/VHS
1987 : Innerspace - DVD/VHS
1987 : Promised Land - DVD/VHS
1986 : Armed and Dangerous - DVD/VHS
1986 : Top Gun - DVD/VHS
1985 : Wildside (TV Series) - DVD/VHS
1984 : Charles in Charge (TV Series) - DVD/VHS
1983 : Amityville 3-D - DVD/VHS
1982 : One of the Boys (TV Series) - DVD/VHS
1982 : As the World Turns (TV Series) - DVD/VHS
1982 : ABC Afterschool Specials (TV Series) - DVD/VHS
1981 : Rich and Famous - DVD/VHS

Monday, March 16, 2009

Good Movie List


MOVIE Year Country

1 The Shawshank Redemption 1994 USA
2 The Dark Knight 2008 USA
3 Schindler`s List 1993 USA
4 12 Angry Men 1957 USA
5 Pulp Fiction 1994 USA
6 Casablanca 1942 USA
7 Seven Samurai 1954 Japan
8 Fight Club 1999 USA
9 Cidade de Deus 2002 Brazil
10 Marmoulak 2004 Iran
11 Goodfellas 1990 USA
12 Once Upon a Time in the West 1968 USA
13 Rear Window 1954 USA
14 One Flew Over the Cuckoo`s Nest 1975 USA
15 The Silence of the Lambs 1991 USA
16 The Usual Suspects 1995 USA
17 WALL·E 2008 USA
18 Psycho 1960 USA
19 Raiders of the Lost Ark 1981 USA
20 Apocalypse Now 1979 USA
21 American Beauty 1999 USA
22 Se7en 1995 USA
23 American History X 1998 USA
24 Taxi Driver 1976 USA
25 Citizen Kane 1941 USA
26 Slumdog Millionaire 2008 UK
27 Vertigo 1958 USA
28 It`s a Wonderful Life 1946 USA
29 Amélie 2001 France
30 Paths of Glory 1957 USA
31 Memento 2000 USA
32 Mask in the Mirror 2006 USA
33 Requiem for a Dream 2000 USA
34 Saving Private Ryan 1998 USA
35 Das Boot 1981 Germany
36 Sen to Chihiro no kamikakushi 2001 Japan
37 Chinatown 1974 USA
38 Rashômon 1950 Japan
39 The Bridge on the River Kwai 1957 USA
40 The Departed 2006 USA
41 Das Leben der Anderen 2006 Germany
42 The Wrestler 2008 USA
43 Eternal Sunshine of the Spotless Mind 2004 USA
44 The Pianist 2002 USA
45 Forrest Gump 1994 USA
46 Vincent 1982 USA
47 Monty Python and the Holy Grail 1975 USA
48 The Treasure of the Sierra Madre 1948 USA
49 To Kill a Mockingbird 1962 USA
50 Pan`s Labyrinth 2006 Spain
51 The Shining 1980 USA
52 A Clockwork Orange 1971 USA
53 2001: A Space Odyssey 1968 USA
54 Sin City 2005 USA
55 Batman Begins 2005 USA
56 Safety Last! 1923 USA
57 The Great Escape 1963 USA
58 The Prestige 2006 USA
59 The Message 1976 USA
60 The Sting 1973 USA
61 Der Untergang (The Downfall) 2004 Germany
62 Hotel Rwanda 2004 USA
63 L.A. Confidential 1997 USA
64 Life is beautiful 1997 Italy
65 Bicycle Thief 1948 Italy
66 On the Waterfront 1954 USA
67 The Elephant Man 1980 UK
68 Fargo 1996 USA
69 Blade Runner 1982 USA
70 The Curious Case of Benjamin Button 2008 USA
71 Donnie Darko 2001 USA
72 There Will Be Blood 2007 USA
73 Gladiator 2000 USA
74 The Manchurian Candidate 1962 USA
75 Into the Wild 2007 USA
76 Jaws 1975 USA
77 Braveheart 1995 USA
78 Judgment at Nuremberg 1961 USA
79 No Country for Old Men 2007 USA
80 Oldboy 2003 USA
81 Battle of Algiers 1966 France
82 Heat 1995 USA
83 Stand by Me 1986 USA
84 Butch Cassidy and the Sundance Kid 1969 USA
85 The Bourne Ultimatum 2007 USA
86 Platoon 1986 USA
87 The Graduate 1967 USA
88 Die Hard 1988 USA
89 The Twilight Samurai 2002 Japan
90 The Princess Bride 1987 USA
91 Let the Right One In 2008 Sweden
92 V for Vendetta 2005 USA
93 Annie Hall 1977 USA
94 Kill Bill: Vol. 1 2003 USA
95 Million Dollar Baby 2004 USA
96 The Sixth Sense 1999 USA
97 Twelve Monkeys 1995 USA
98 Ballad of a soldier 1959 Russia
99 Roman Holiday 1953 USA
100 Casino 1995 USA
101 Changeling 2008 USA
102 Frost/Nixon 2008 USA
103 In Bruges 2008 UK
104 Children of Men 2006 USA
105 Fireworks Wednesday 2006 Iran
106 The Children of Heaven 1997 Iran
107 The diving bell and the butterfly 2007 France
108 Glory 1989 USA
109 To Have and Have Not 1944 USA
110 Groundhog Day 1993 USA
111 All Quiet on the Western Front 1930 USA
112 Letters from Iwo Jima 2006 USA
113 Little Miss Sunshine 2006 USA
114 Memories of Murder 2003 South Korea
115 Crouching Tiger, Hidden Dragon 2000 China
116 Once 2006 USA
117 3:10 to Yuma 2007 USA
118 Rocky 1976 USA
119 Rosemary`s Baby 1968 USA
120 Serenity 2005 USA
121 American Gangster 2007 USA
122 Shaun of the Dead 2004 UK
123 Before Sunrise 1995 USA
124 Stardust 2007 USA
125 Blood Diamond 2006 USA
126 Casino Royale 2006 USA
127 Papillon 1973 USA
128 Cinderella Man 2005 USA
129 Bronenosets Potyomkin 1925 USA
130 The Insider 1999 USA
131 The Killing Fields 1984 USA
132 Edward Scissorhands 1990 USA
133 The Notebook 2004 USA
134 Beautiful City 2004 Iran
135 The Straight Story 1999 USA
136 This Is Spinal Tap 1984 USA
137 Milk 2008 USA
138 Grindhouse 2007 USA
139 No Man`s Land 2001 Bosnia
140 Hot Fuzz 2007 USA
141 Walk the Line 2005 USA
142 Iron Man 2008 USA
143 Juno 2007 USA
144 Good Will Hunting 1997 USA
145 Kill Bill: Vol. 2 2004 USA
146 Mystic River 2003 USA
147 Magnolia 1999 USA
148 Miller`s Crossing 1990 USA
149 Monsters Inc. 2001 USA
150 4 months 3 weeks and 2 days 2007 Romania
151 Talk to Her 2002 Spain
152 Persepolis 2007 USA
153 Pirates of the Caribbean: The Curse of the Black Pearl 2003 USA
154 Rebel Without a Cause 1955 USA
155 Being John Malkovich 1999 USA
156 A Beautiful Mind 2001 USA
157 Apocalypto 2006 USA
158 Stranger Than Fiction 2006 USA
159 25th Hour 2002 USA
160 The Birds 1963 USA
161 SOPHIE SCHOLL-The final days 2005 Germany
162 Thank You for Smoking 2005 USA
163 The Cranes Are Flying 1957 Russia
164 The Last Emperor 1987 USA
165 Felon 2008 USA
166 Ferris Bueller`s Day Off 1986 USA
167 FIFA Fever 2005 USA
168 Bashu the little stranger 1989 Iran
169 The Truman Show 1998 USA
170 Garden State 2004 USA
171 Turtles can fly 2004 Iran
172 United 93 2006 USA
173 My Fair Lady 1964 USA
174 300 2006 USA
175 Kiss Kiss Bang Bang 2005 USA
176 Little Children 2006 USA
177 Shall we dance? 1996 USA
178 Office Space 1999 USA
179 The Motorcycle Diaries 2004 Argentina
180 Sabrina 1954 USA
181 Conspiracy 2001 USA
182 Dead Poets Society 1989 USA
183 Joyeux Noël 2005 France
184 Blue Velvet 1986 USA
185 Superbad 2007 USA
186 Boogie Nights 1997 USA
187 The Boondock Saints 1999 USA
188 The Butterfly Effect 2004 USA
189 Dear Frankie 2004 USA
190 The Reader 2008 UK
191 The Longest Day 1962 USA
192 Equilibrium 2002 USA
193 The Others 2001 USA
194 Ghost in the Shell 1995 Japan
195 The Official History 1985 Argentina
196 Goodbye Lenin! 2003 Germany
197 Withnail & I 1987 USA
198 Love Actually 2003 USA
199 March of the Penguins 2005 France
200 Sweeney Todd: The Demon Barber of Fleet Street 2007 USA
201 Match Point 2005 USA
202 The Kite Runner 2007 USA
203 The Last King of Scotland 2006 USA
204 The Sound of Music 1965 USA
205 Munich 2005 USA
206 Traffic 2000 USA
207 The Barbarian Invasion 2003 France
208 The Pursuit of Happyness 2006 USA
209 A Very Long Engagement 2004 France
210 Road to Perdition 2002 USA
211 Scent of a Woman 1992 USA
212 Babel 2006 USA
213 Ive Loved You So Long 2008 France
214 Spider-Man 2 2004 USA
215 Lust Caution 2007 Taiwan
216 Missing 1982 USA
217 Moulin Rouge! 2001 USA
218 The Apartment 1996 France
219 Catch Me If You Can 2002 USA
220 The Bourne Identity 2002 USA
221 Dark City 1998 USA
222 The Constant Gardener 2005 UK
223 The Great Debaters 2007 USA
224 The Illusionist 2006 USA
225 The Verdict 1982 USA
226 The Counterfeiters 2007 Austria
227 Everything Is Illuminated 2005 USA
228 Yellow Sky 1948 USA
229 The Color Of Paradise 1999 Iran
230 Star Trek: The Wrath of Khan 1982 USA
231 Keith 2008 USA
232 Planet Terror 2007 USA
233 Harry Potter and the Goblet of Fire 2005 USA
234 Wallace & Gromit in Project Zoo 2003 USA
235 Whale Rider 2002 USA
236 Inside Man 2006 USA
237 You Can Count on Me 2000 USA
238 Lord of War 2005 USA
239 The Assassination of Jesse James by the Coward Robert Ford 2007 USA
240 The Last of the Mohicans 1992 USA
241 When Harry Met Sally... 1989 USA
242 Kolja 1996 Czech Republic
243 Outfoxed: Rupert Murdoch`s War on Journalism 2004 USA
244 Predator 1987 USA
245 A History of Violence 2005 USA
246 Borat: Cultural Learnings of America for Make Benefit Glorious Nation of Kazakhstan 2006 USA
247 Brick 2005 USA
248 Running Scared 2006 USA
249 The Guns of Navarone 1961 USA
250 The Painted Veil 2006 USA
251 The White Balloon 1995 Iran
252 Burn After Reading 2008 USA
253 Knocked Up 2007 USA
254 Notes on a Scandal 2006 UK
255 Live Free or Die Hard 2007 USA
256 Leaving Las Vegas 1995 USA
257 Rescue Dawn 2006 USA
258 Sophie`s Choice 1982 USA
259 Postino Il 1994 Italy
260 Animal House 1978 USA
261 Roots: The Next Generations 1979 USA
262 Ocean`s Eleven 2001 USA
263 House of Flying Daggers 2004 China
264 Paradise Now 2005 Palestine
265 vor 2006 Russia
266 Remember the Titans 2000 USA
267 Rocky Balboa 2006 USA
268 The 40 Year Old Virgin 2005 USA
269 Saving Face 2004 USA
270 The Short Films of David Lynch 2002 USA
271 Midnight Run 1988 USA
272 Cashback 2006 UK
273 The Bourne Supremacy 2004 USA
274 Corpse Bride 2005 USA
275 The Fountain 2006 USA
276 The Bank Job 2008 USA
277 The Omen 1976 USA
278 Vicky Cristina Barcelona 2008 USA
279 Final Fantasy VII: Advent Children 2005 USA
280 Five Easy Pieces 1970 USA
281 Half Nelson 2006 USA
282 Waking Life 2001 USA
283 Hustle & Flow 2005 USA
284 Life as a House 2001 USA
285 Training Day 2001 USA
286 Queen Margot 1994 France
287 Perfume: The Story of a Murderer 2006 Germany
288 The Railway Children 1970 USA
289 Shakespeare in Love 1998 USA
290 Grbavica 2006 Bosnia
291 I stand Alone 1998 France
292 Spider-Man 2002 USA
293 Blow 2001 USA
294 Mongol 2007 Kazakhstan
295 Enfant L 2005 Belgium
296 The Descent 2005 USA
297 Hel van Tanger De 2006 France
298 Enemy at the Gates 2001 USA
299 Gangs of New York 2002 USA
300 Taste of Cherry 1997 Iran
301 Valkyrie 2008 USA
302 Closer 2004 USA
303 Waitress 2007 USA
304 In the Bedroom 2001 USA
305 The Mist 2007 USA
306 A Bug`s Life 1998 USA
307 Body of Lies 2008 USA
308 Chocolat 2000 USA
309 Antwone Fisher 2002 USA
310 Sunshine 2007 USA
311 Breakfast on Pluto 2005 USA
312 The Hurricane 1999 USA
313 Tropic Thunder 2008 USA
314 The Incredible Hulk 2008 USA
315 The School of Rock 2003 USA
316 Death at a Funeral 2007 USA
317 The Unbearable Lightness of Being 1988 USA
318 The cyclist 1987 Iran
319 Pirates of the Caribbean: Dead Man`s Chest 2006 USA
320 The Night of the Generals 1967 USA
321 Erin Brockovich 2000 USA
322 Shooter 2007 USA
323 A Scanner Darkly 2006 USA
324 Happy-Go-Lucky 2008 UK
325 The Grand Voyage 2004 France
326 Syriana 2005 USA
327 Traitor 2008 USA
328 The Pink Panther 1963 USA
329 There`s Something About Mary 1998 USA
330 Flags of Our Fathers 2006 USA
331 The Talented Mr. Ripley 1999 USA
332 Gosford Park 2001 USA
333 The Age of Beauty 1992 France
334 Hard Candy 2005 USA
335 Harry Potter and the Sorcerer`s Stone 2001 USA
336 Iris 2001 UK
337 Wedding Crashers 2005 USA
338 The Full Monty 1997 USA
339 Misérables Les 1998 USA
340 Veuve de Saint-Pierre La 2000 USA
341 A Perfect World 1993 USA
342 Four Weddings and a Funeral 1994 UK
343 Katyn 2007 Poland
344 The Chronicles of Narnia: The Lion the Witch and the Wardrobe 2005 USA
345 The Chumscrubber 2005 USA
346 Crank 2006 USA
347 The Dreamers 2003 France
348 Eyes Wide Shut 1999 USA
349 Flushed Away 2006 USA
350 The Terminal 2004 USA
351 Banlieue 13 2004 France
352 I Am Legend 2007 USA
353 Kingdom of Heaven 2005 USA
354 Lilo & Stitch 2002 USA
355 Memoirs of a Geisha 2005 USA
356 Mrs Henderson Presents 2005 USA
357 Titus 1999 USA
358 2 Days in Paris 2007 France
359 A Walk to Remember 2002 USA
360 The Hunting Party 2007 USA
361 Disturbia 2007 USA
362 Pedar 1996 Iran
363 The Upside of Anger 2005 USA
364 The Wings of the Dove 1997 USA
365 Under Fire 1983 USA
366 Tristan + Isolde 2006 Germany
367 Quantum of Solace 2008 UK
368 Harsh Times 2005 USA
369 We Own the Night 2007 USA
370 Wilbur Wants to Kill Himself 2002 USA
371 I Robot 2004 USA
372 X-Men: The Last Stand 2006 USA
373 Get Smart 2008 USA
374 My Summer of Love 2004 USA
375 Wanted 2008 USA
376 Ocean`s Thirteen 2007 USA
377 Pirates of the Caribbean: At World`s End 2007 USA
378 Appaloosa 2008 USA
379 Bridget Jones`s Diary 2001 UK
380 Artificial Intelligence: AI 2001 USA
381 Angel-A 2005 USA
382 The Brave One 2007 USA
383 Pitch Black 2000 USA
384 The Holiday 2006 USA
385 The Italian Job 2003 USA
386 The New World 2005 USA
387 Wicker Park 2004 USA
388 Taghato 2006 Iran
389 The Girl Next Door 2004 USA
390 Gridiron Gang 2006 USA
391 Twin Peaks: Fire Walk with Me 1992 USA
392 Ice Age: The Meltdown 2006 USA
393 In the Realm of the Hackers 2003 USA
394 Meet the Robinsons 2007 USA
395 Mission: Impossible III 2006 USA
396 Molly: An American Girl on the Home Front 2006 USA
397 Monster House 2006 USA
398 Napoleon Dynamite 2004 USA
399 The Crime of Father Amaro 2002 Mexico
400 P.S. I Love You 2007 USA
401 10 Things I Hate About You 1999 USA
402 Basic Instinct 1992 USA
403 Scoop 2006 USA
404 A Mighty Heart 2007 USA
405 Star Wars: Episode II - Attack of the Clones 2002 USA
406 Swimming Pool 2003 USA
407 The Ballad of Jack and Rose 2005 USA
408 Rush Hour 1998 USA
409 The Color of Money 1986 USA
410 The Devil Wears Prada 2006 USA
411 Gia 1998 USA
412 The X Files 1998 USA
413 21 2008 USA
414 Hellboy 2004 USA
415 Click 2006 USA
416 50 First Dates 2004 USA
417 Just Like Heaven 2005 USA
418 Death Race 2008 USA
419 Vecher nakanune Ivana Kupala 1968 USA
420 Lost and Delirious 2001 USA
421 Love Ludlow 2005 USA
422 Rob Roy 1995 USA
423 Mission: Impossible 1996 USA
424 The Other Boleyn Girl 2008 USA
425 16 Blocks 2006 USA
426 A Good Year 2006 USA
427 Sky High 2005 USA
428 Mamma Mia! 2008 USA
429 Superman Returns 2006 USA
430 Music and Lyrics 2007 USA
431 My Big Fat Greek Wedding 2002 USA
432 Curious George 2006 USA
433 The King 2005 USA
434 Underworld 2003 USA
435 Safar e Ghandehar 2001 Iran
436 TMNT 2007 USA
437 Vantage Point 2008 USA
438 Imagine Me & You 2005 USA
439 Amant L 1992 France
440 War and Peace 1956 USA
441 Loving Annabelle 2006 USA
442 MacGyver: Trail to Doomsday 1994 USA
443 Red Eye 2005 USA
444 Smokin` Aces 2006 USA
445 Liar Liar 1997 USA
446 Blades of Glory 2007 USA
447 The Midnight Meat Train 2008 USA
448 The Thirteenth Floor 1999 USA
449 Mrs. Doubtfire 1993 USA
450 Risky Business 1983 USA
451 The Family Man 2000 USA
452 Dreamgirls 2006 USA
453 The Birdcage 1996 USA
454 Courage Under Fire 1996 USA
455 The Edge 1997 USA
456 Tideland 2005 USA
457 Torn Curtain 1966 USA
458 Hancock 2008 USA
459 The Hitchhiker`s Guide to the Galaxy 2005 USA
460 Where the Truth Lies 2005 USA
461 Madagascar 2005 USA
462 Sleepless in Seattle 1993 USA
463 National Treasure: Book of Secrets 2007 USA
464 2010 1984 USA
465 A Knight`s Tale 2001 USA
466 Silent Hill 2006 USA
467 Astérix & Obélix: Mission Cléopâtre 2002 USA
468 Spider-Man 3 2007 USA
469 The Hills Have Eyes 2006 USA
470 DuckTales: The Movie - Treasure of the Lost Lamp 1990 USA
471 The Libertine 2004 USA
472 Unfaithful 2002 USA
473 The Quiet 2005 USA
474 The Skeleton Key 2005 USA
475 Great Expectations 1998 USA
476 Sinbad: Legend of the Seven Seas 2003 USA
477 Any Given Sunday 1999 USA
478 Land of the Dead 2005 USA
479 The Last Mimzy 2007 USA
480 Robots 2005 USA
481 City of Angels 1998 USA
482 A Perfect Murder 1998 USA
483 The Lion King 1½ 2004 USA
484 EuroTrip 2004 USA
485 The Da Vinci Code 2006 USA
486 Hannibal 2001 USA
487 Under Suspicion 2000 USA
488 Idiocracy 2006 USA
489 Zion Canyon: Treasure of the Gods 1996 USA
490 The Astronaut Farmer 2006 USA
491 Mr. & Mrs. Smith 2005 USA
492 Night at the Museum 2006 USA
493 The Postman Always Rings Twice 1981 USA
494 Road Trip 2000 USA
495 A Lot Like Love 2005 USA
496 Femme Fatale 2002 USA
497 Snakes on a Plane 2006 USA
498 Stealing Beauty 1996 USA
499 The Day After Tomorrow 2004 USA
500 What Women Want 2000 USA
501 The Punisher 2004 USA
502 Une femme française 1995 France
503 Hitman 2007 USA
504 The Snows of Kilimanjaro 1952 USA
505 Where the Buffalo Roam 1980 USA
506 Zathura: A Space Adventure 2005 USA
507 Just Friends 2005 USA
508 Beerfest 2006 USA
509 Me Myself & Irene 2000 USA
510 Mirrors 2008 USA
511 My Best Friend`s Wedding 1997 USA
512 The Hot Spot 1990 USA
513 Dirty Deeds 2002 USA
514 Their Eyes Were Watching God 2005 USA
515 The Longest Yard 2005 USA
516 Event Horizon 1997 USA
517 The Game Plan 2007 USA
518 Once Upon a Time in Mexico 2003 USA
519 I Now Pronounce You Chuck & Larry 2007 USA
520 King Arthur 2004 USA
521 Resident Evil: Extinction 2007 USA
522 Man of the Year 2006 USA
523 Mindhunters 2004 USA
524 You`ve Got Mail 1998 USA
525 The Number 23 2007 USA
526 Patch Adams 1998 USA
527 Doomsday 2008 USA
528 Anger Management 2003 USA
529 Shrek the Third 2007 USA
530 The Good German 2006 USA
531 The Nanny Diaries 2007 USA
532 The Sentinel 2006 USA
533 The X Files: I Want to Believe 2008 USA
534 Transporter 2 2005 USA
535 Two for the Money 2005 USA
536 Van Wilder 2002 USA
537 Wild Hogs 2007 USA
538 Open Season 2006 USA
539 Beer League 2006 USA
540 Entrapment 1999 USA
541 Fun with Dick and Jane 2005 USA
542 Miami Vice 2006 USA
543 Ocean`s Twelve 2004 USA
544 Assassins 1995 USA
545 Blue Streak 1999 USA
546 Arthur et les Minimoys 2006 USA
547 Green Card 1990 USA
548 The Brothers Grimm 2005 USA
549 The Break-Up 2006 USA
550 The Jackal 1997 USA
551 Transporter 3 2008 USA
552 Inside the Vatican 1993 USA
553 Jumper 2008 USA
554 Lady in the Water 2006 USA
555 The Heartbreak Kid 2007 USA
556 Nate and Hayes 1983 USA
557 100 Girls 2000 USA
558 Chicken Little 2005 USA
559 Pathology 2008 USA
560 Fantastic Four 2005 USA
561 Deception 2008 USA
562 The Legend of Zorro 2005 USA
563 Undercover Brother 2002 USA
564 Hostel 2005 USA
565 Last Action Hero 1993 USA
566 Dark Water 2005 USA
567 Deuce Bigalow: Male Gigolo 1999 USA
568 Black Snake 1973 USA
569 Fred Claus 2007 USA
570 Valiant 2005 USA
571 Waterworld 1995 USA
572 Into the Blue 2005 USA
573 Poseidon 2006 USA
574 Æon Flux 2005 USA
575 The Black Dahlia 2006 USA
576 Max Payne 2008 USA
577 Good Luck Chuck 2007 USA
578 John Tucker Must Die 2006 USA
579 Lord of Illusions 1995 USA
580 Bangkok Dangerous 2008 USA
581 A Cinderella Story 2004 USA
582 American Pie Presents Beta House 2007 USA
583 The Magic Roundabout 2005 USA
584 The Postman 1997 USA
585 White Noise 2005 USA
586 The Mistress of Spices 2005 USA
587 Babylon A.D. 2008 USA
588 Stormbreaker 2006 USA
589 The Happening 2008 USA
590 The Core 2003 USA
591 Killing Me Softly 2002 USA
592 Cheaper by the Dozen 2 2005 USA
593 The Mummy: Tomb of the Dragon Emperor 2008 USA
594 Scary Movie 4 2006 USA
595 The Care Bears Movie 1985 USA
596 Escape from L.A. 1996 USA
597 King Kong 1967 Japan
598 The Ring Two 2005 USA
599 Clockstoppers 2002 USA
600 Eragon 2006 USA
601 Bewitched 2005 USA
602 DOA: Dead or Alive 2006 USA
603 Elektra 2005 USA
604 Concile de pierre Le 2006 France
605 Little Nicky 2000 USA
606 10000 BC 2008 USA
607 The Specialist 1994 USA
608 Garfield 2004 USA
609 Headspace 2005 USA
610 Miss Conception 2008 USA
611 After School Special 2003 USA
612 The Dukes of Hazzard 2005 USA
613 Boat Trip 2002 USA
614 Erosion 2005 USA
615 Sliver 1993 USA
616 Stay Alive 2006 USA
617 Yours Mine and Ours 2005 USA
618 Red Sonja 1985 Netherlands
619 Deuce Bigalow: European Gigolo 2005 USA
620 Two Moon Junction 1988 USA
621 Stomp the Yard 2007 USA
622 The Simple Life 2003 USA
623 Dorm Daze 2 2006 USA
624 The War of the Worlds 2005 USA
625 Love in Paris 1997 USA
626 Epic Movie 2007 USA
627 Pepsi More Music: The DVD Volume 1 2003 USA
628 T.V.s Greatest Sports Bloopers Volume 2 1996 USA
629 Horizon 1974 USA
630 The Birth of a Dragon Fly 1913 USA
631 CMT Greatest Moments: Alabama 2006 USA
632 Die Czardasfürstin 1927 USA
633 The All Ukrainian Selection Round of the Contest Eurovision 2004 USA
634 Sweet Nell of Old Drury 1911 USA

Sunday, March 15, 2009

একজন চাকুরিজীবি পিঁপড়ার গল্প

একজন চাকুরিজীবি পিঁপড়ার গল্প
ম্যাভেরিক

প্রতিদিন সকাল সকাল ছোট্ট পিঁপড়াটি অফিসে এসেই কাজে ঝাঁপিয়ে পড়ে। প্রচুর কাজ করে সে, সময় কাটে তার চমৎকার সুখে।

অফিসের প্রধান, সিংহ অবাক হয়ে লক্ষ করে কোনো ধরণের সুপারভিশন ছাড়াই পিঁপড়া কাজ করে যাচ্ছে। সুপারভিশন ছাড়াই যদি পিঁপড়া এত কাজ করতে পারে, সিংহ ভাবে, তাহলে একজন সুপারভাইজার থাকলে তো সে আরো বেশি কাজ করতে পারবে।

সিংহ তাই তেলাপোকাকে সুপারভাইজার পদে নিয়োগ দিল; সুপারভাইজার হিসেবে তেলাপোকার রয়েছে প্রচুর অভিজ্ঞতা আছে এবং চমৎকার সব রিপোর্ট লেখায় তার বেশ সুনাম।


তেলাপোকার প্রথম পদক্ষেপ হলো অ্যাটেনডেন্স সিস্টেমে একটি ঘড়ির ব্যবস্থা করা। লেখার কাজে তাকে সাহায্য এবং লেখা টাইপ করার জন্য একজন সেক্রেটারিরও প্রয়োজন হলো তার।

তেলাপোকা মাকড়শাকে তার সেক্রেটারি পদে নিয়োগ দিল, যার কাজ হলো সব নথিপত্র ম্যানেজ করা এবং ফোন কল তদারক করা।


তেলাপোকার রিপোর্ট দেখে সিংহ খুব খুশি হলো। সে তেলাপোকাকে নির্দেশ দিল প্রোডাকশন হার এবং ট্রেন্ড অ্যানালাইসিসের গ্রাফ তৈরি করে দিতে যাতে সেগুলি বোর্ড মিটিংয়ে উপস্থাপন করা যায়।

তেলাপোকা এ কাজের জন্য একটি নতুন কম্পিউটার এবং একটি লেজার প্রিন্টার ক্রয় করল। এবং আই.টি. ডিপার্টমেন্টের দায়িত্ব নেয়ার জন্য মাছিকে নিয়োগ দিল।


পিঁপড়া, একদা যে প্রচুর কাজ করত এবং হাসি খুশি ছিল, এত সব পেপারওয়ার্ক, মিটিং অপছন্দ করা শুরু করল, কারণ এগুলি তার মূল কাজের অধিকাংশ সময় নষ্ট করতে লাগলো।

সিংহ এবার সিদ্ধান্ত নিল পিঁপড়া যে ডিপার্টমেন্টে কাজ করে, তার সামগ্রিক দায়িত্ব নেয়ার জন্য কাউকে নিয়োগ দেয়া দরকার। এ কাজের ভার দেয়া হলো সিকাডা'কে, যার প্রথম কাজ হলো একটি কার্পেট এবং একটি এরগোনমিক চেয়ার কেনা।


সিকাডা'রও দরকার হলো একটি কম্পিউটার, এবং একজন ব্যক্তিগত সেক্রেটারির, যাকে সে তার আগের অফিস থেকে নিয়ে আসলো। সিকাডা বাজেট কন্ট্রোল স্ট্রাটেজিক অপটিমাইজেশন প্ল্যান এর উপর বেশ জোর দিল।

কিন্তু পিঁপড়ার ডিপার্টমেন্ট এখন একটি বিষণ্ণ জায়গায় পরিণত হলো; সেখানে কাজ করে কেউ আর হাসে না, সবারই মন ভার থাকে।

ঠিক সে মুহূর্তে সিকাডা সিংহকে বুঝালো যে একটি ক্লাইমেটিক স্টাডি বেশ জরুরি হয়ে পড়েছে। পিঁপড়ার ডিপার্টমেন্টের পারফরমেন্স পর্যালোচনা করে সিংহ দেখল প্রোডাকশন বেশ কমে গেছে, তাই সে পেঁচার শরণাপন্ন হলো সমাধানের জন্য। পেঁচা বিশ্বখ্যাত, স্বনামধন্য একজন কনসালট্যান্ট।


পেঁচা তিন মাস ধরে কাজ করে বিশাল এক রিপোর্ট তৈরি করল। রিপোর্টটি কয়েকটি বড় বড় খন্ডে বিভক্ত, যার সারমর্ম: পিঁপড়ার ডিপার্টমেন্ট ওভারস্টাফড।

মোটিভেশনের অভাব এবং নেগেটিভ অ্যাটিটিউডের কারণে পিঁপড়াকে ছাটাই করা হলো।


[গল্পে বর্ণিত সব ঘটনা, চরিত্র কাল্পনিক]