Tuesday, April 7, 2009

জগৎজ্যোতি! যিনি ছিলেন বাংলার প্রথম বীরশ্রেষ্ঠ

ফিরে দেখা ইতিহাস
জগৎজ্যোতি! যিনি ছিলেন বাংলার প্রথম বীরশ্রেষ্ঠ
ভাস্কর চৌধুরী


একজন জগৎজ্যোতি! বাংলাদেশের প্রথম বীরশ্রেষ্ঠ! যাকে ’৭১ এর ১৬ নভেম্বর শহীদ হবার পর অনন্য বীরত্ব প্রদর্শনের জন্য অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ মরণোত্তর খেতাব প্রদানের ঘোষনা দেয়া হয়। কেন ঘোষনা দিয়েও জগৎজ্যোতিকে প্রদান করা হলো না মরনোত্তর সর্বোচ্চ খেতাব- এই প্রশ্নের উত্তর আজো অজ্ঞাত। জগৎজ্যোতির সহযোদ্ধা আর মুক্তিযোদ্ধাদের গবেষকরাও আজও খুঁজে বেড়ান এই প্রশ্নের উত্তর।

আর আজ তাকে নিয়েই এ আয়োজন।

সূর্যের লাল আভাটা পশ্চিমাকাশে! সময় তার শেষ সন্ধায় দাঁড়িয়ে। যুদ্ধের মিশনে এক যোদ্ধার মরণপণ চালিয়ে যাওয়া ক্রান্তিকাল। সহযোদ্ধাদের পালানোর সুযোগ করে দিয়ে মরনপন লড়াই চালিয়ে যাওয়া যোদ্ধা। হঠাৎ! পাশে থাকা সহযোদ্ধাও গুলিবিদ্ধ। নিজের মাথার গামছা খুলে বেঁধে রক্তপড়া বন্ধ করেন সহযোদ্ধার। পালানোর প্রস্তাব। কিন্তু না! গর্জে ওঠে তার বীরকন্ঠ। তেজোদীপ্ত সুরে বলে- ‘পালাবো না, সবকটাকে শেষ করে তবে যাবো।’ তারপর ! একাই ১২ জন পাকসেনাকে খতম। অস্ত্রভান্ডারও শূন্য। তবু পিছু ফেরা নয়! আচমকা একটা বুলেট সূর্যের লাল আভাটার ন্যায় বিদ্ধ হয় যোদ্ধার শরীরে। শেষবারের মতো চিৎকার করে ওঠা- ‘আমি যাইগ্যা’।
শেষ চিৎকার! সূর্যের প্রদীপ নিভে যাওয়ার সাথে সাথে এক যোদ্ধার আলোও নিভে যায়! বলছি যোদ্ধা নামের সেই ব্যক্তিটির কথা। যুদ্ধের ময়দানে যার হাত দিয়ে তৈরি হয় মুক্তিযোদ্ধাদের সমন্বয়ে ‘দাস পাটির্’। যাকে ’৭১ এর ১৬ নভেম্বর শহীদ হবার পর অনন্য বীরত্ব প্রদর্শনের জন্য অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ মরণোত্তর খেতাব প্রদানের ঘোষনা দেয়া হয়। সেই যোদ্ধা, সেই খেতাব যার গলায় পরার কথা তিনি আমাদের অহংকার ‘জগৎজ্যোতি’। আমাদের নিজস্ব মানচিত্র আর নিজস্ব পতাকার মালিকানা দিয়ে চিরদিনের জন্য বিদায় নেয় সেই ‘জগৎজ্যোতি’ দাস। অথচ তার প্রাপ্য সেই সর্বোচ্চ খেতাব আজও তাকে দিতে পারেনি দেশ!

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়েই মুক্তিযুদ্ধের উত্তরপূর্ব রণাঙ্গণের মুক্তি সেনাদের কাছে কিংবদন্তিতে পরিণত হয় জগৎজ্যোতির বীরত্বগাথা সংগ্রামের কাহিনী। আজও তার কথা ভুলতে পারেনি যুদ্ধকালীন সময়ে তার সহযোদ্ধারা। তাদের চোখে এখনো ভাসে জগৎজ্যোতির সাথে তাদের শেষ দেখা।

একটি সম্মুখযুদ্ধে পাকবাহিনীর দোসরদের কূটচালের ফাঁদে পড়ে আর নিজ সহযোদ্ধাদের বাঁচাতে গিয়ে আত্ম উৎসর্গ করেন জগৎজ্যোতি দাস। তবে তার আগেই শহীদ জগৎজ্যোতি অমর বীরত্বগাথার মাধ্যমে নিশ্চিত করে যান আমাদের নিজস্ব মানচিত্র আর নিজস্ব পতাকার মালিকানা। বিগত আ’লীগ শাসনামালে শহীদ জগৎজ্যোতির পরিবারকে একখন্ড জমি দেয়ার অঙ্গীকার করেছিলেন মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে জগৎজ্যোতিরই নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। সেই অঙ্গিকারটিও কেবল ফাঁকা বুলির মধ্যেই থেকে গেছে। বাস্তবায়িত হয়নি আজও। ফলে মুক্তিযুদ্ধের অনন্য অবদানের জন্য মরনোত্তর সর্বোচ্চ খেতাব অর্জনকারী প্রথম ব্যক্তিটির উত্তরসূরীরা এখন যাযাবরের মতো জীবন কাটাচ্ছেন। এককালে তাদের নিজেদের যে বাড়িটা ছিলো, ’৭১-এ জগৎজ্যোতিকে হত্যা করে সেই বাড়িটিতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছিলো হায়েনারা। তারপর অভাবের তাড়নায় ভিটেমাটিও বিক্রি করে ফেলে জগৎজ্যোতির পরিবার। এখন জগৎজ্যোতির উত্তরসূরীরা হবিগঞ্জে ভাড়া করা বাড়িতে থাকেন। দিনমুজুরের কাজ করে টেনে চলেন জীবিকার জোয়াল।


একজন ‘জগৎজ্যোতি’
গ্রামের নাম জলসুখা। হবিগঞ্জের আজিমিরগঞ্জ উপজেলার ছোট্ট একটি গ্রাম। সেই গায়ের জীতেন্দ্র চন্দ্র দাস ও হরিমতি দাসের কনিষ্ঠ পুত্র জগৎজ্যোতি দাস। জগৎজ্যোতির জন্ম ১৯৪৯ সালের ২৬ এপ্রিল। বাবা ও বড় ভাই রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন।
দারিদ্রতার সাথে লড়াই করেই ১৯৬৮ সালে ২য় বিভাগে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন জগৎজ্যোতি।


দাস পার্টি
১৯৭১ সালে জগৎজ্যোতি ছিলেন সুনামগঞ্জ ছাত্র ইউনিয়নের প্রথম সারির কর্মী। সশস্ত্র যুদ্ধে অংশ নেয়ার লক্ষে সদলবলে ভারতের শিলংয়ে ট্রেনিং নিতে যান তিনি। নেতৃত্বগুন সম্পন্ন, নেতৃত্বের প্রতি সংবেদনশীলতা, কঠোর পরিশ্রমি এবং ইংরেজি ও হিন্দি ভাষার দক্ষতা থাকার কারনে সে দলের নেতা মনোনিত হন জগৎজ্যোতি। জ্যোতির নেতৃত্বাধীন এই দলটিই পরবর্তীতে ‘দাস পার্টি’ হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।
মুক্তিযুদ্ধকালে পাকিস্তানী ও রাজাকারদের কাছে দাস পার্টি ছিলো মূর্তিমান আতঙ্কের নাম। আর মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে সাফল্যের প্রতীক। মুক্তিযুদ্ধে টেকেরঘাট সাব-সেক্টরের অধীনে বিস্তৃর্ণ ভাটি অঞ্চল শত্রুমুক্ত রাখার দায়িত্ব পড়ে জগৎজ্যোতির উপর। দিরাই, শাল্লা, ছাতক, আজমিরিগঞ্জ, বানিয়াচং, জামালগঞ্জ, তাহিরপুর, কিশোরগঞ্জ ও নেত্রকোনার নৌপথ পাক দখলমুক্ত রাখার যুদ্ধে অবতীর্ণ হয় জ্যোতির দাসপার্টি। ভাটির জনপদে শত্রুদের ভীত কাঁপিয়ে দেন জগৎজ্যোতি। দাস পার্টির মূহুর্মূহ আক্রমনে দিশেহারা হয়ে পাকিস্তান সরকার রেডিওতে ঘোষণা দিতে বাধ্য হয়, এই রুট দিয়ে চলাচলকারী ব্যক্তিদের জানমালের দায়িত্ব সরকার নেবে না।
মাত্র ১৩ জন মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে বানিয়াচংয়ে প্রায় ২৫০ পাক বাহিনী ও তাদের দোসরদের ঠেকিয়ে দেন জ্যোতি। এ লড়াইয়ে প্রাণ হারায় শত্রু পরে ৩৫ সদস্য। পাকিস্তানিদের গানবোট ধ্বংস করে দেন জগৎজ্যোতিরা। ১৭ আগস্ট পাহাড়পুড়ে জগৎজ্যোতির বুদ্ধিমুত্তা ও বীরত্বে রক্ষা পায় অসংখ্য নিরীহ বাঙালির প্রাণ ও নারীর সম্ভ্রব। এখানেও পিছু হটে পাকিস্তানীরা। এরপর একের পর এক যুদ্ধজয়ী অভিযান চলতে থাকে জগৎজ্যোতির নেতৃত্বাধীন দাস পার্টির।


যুদ্ধের ময়দানে জগৎজ্যোতি
জগৎজ্যোতি একদম একা হাতে একটা এলএমজি নিয়ে দখল করে নেন জামালগঞ্জ থানা ভবন। সেখানে আস্তানা গেড়েছিলো রাজাকাররা। এরপর জামালগঞ্জ মুক্ত করার অভিযানে রাখেন গুরুত্বপূর্ন ভুমিকা। এ সম্মুখযুদ্ধে শহীদ হন জগৎজ্যোতির সহযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম। মাত্র ১০/১২ জন মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে শ্রীপুর শত্রুমুক্ত করেন জগৎজ্যোতি। খালিয়াজুড়ি থানায় ধ্বংস করে দেন শত্রুপরে বার্জ। আগস্ট মাসে দিরাই-শাল্লায় অভিযান চালিয়ে কোনরূপ গুলি ব্যয় না করেই কৌশলে আটক করেন ১০ জন রাজাকারের একটি দলকে। যারা এলাকায় বেপোরোয়াভাবে খুন, ধর্ষণ ও লুটপাট চালাচ্ছিলো। রানীগঞ্জ ও কাদিরীগঞ্জে অভিযান চালিয়েও জ্যোতি আটক করেন রাজাকারদের। জগৎজ্যোতি তখন মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে এক কিংবদন্তির নাম। সাহস ও অনুপ্রেরণার উৎস।


চক্রব্যুহে অভিমন্যু
১৬ নভেম্বর ভোরের সূর্য ওঠার সাথে সাথেই দাস পার্টির ৪২ সদস্য নিয়ে নৌকাযোগে বাহুবল অভিযানে রওয়ানা দেন জগৎজ্যোতি। ল্ক্ষ্যস্থলে যাওয়ার পূর্বেই বদলপুর নামক স্থানে হানাদারদের পাতা ফাঁদে পা আটকে ফেলেন জগৎজ্যোতি। বদলপুরে পৌঁছামাত্রই জগৎজ্যোতি দেখতে পান ৩/৪ জন রাজাকার ব্যবসায়ীদের নৌকা আটক করে চাঁদা আদায় করছে। ক্ষুব্ধ জ্যোতি রাজাকারদের ধরে আনার নির্দেশ দেন। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধাদের দেখেই পিছু হঠতে থাকে রাজাকাররা। এতে আরো ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন জ্যোতি। ১০/১২ জন মুক্তিযোদ্ধা আর সামান্য গোলাবারুদ নিয়ে তাড়া করেন রাজাকারদের। অথচ কুচক্রীরা পাকসেনাদের বিশাল বহর আর প্রচুর সংখ্যক গোলাবারুদ নিয়ে একটু দূরেই ঘাপটি মেরে ছিলো। শুরু হয় এক জ্যোতির সীমিত গোলাবারুদের সাথে পাকবাহিনীর বিশাল অস্ত্রভান্ডারের এক অসমযুদ্ধ। এক পর্যায়ে গোলাবারুদ কমে আসায় বেকায়দায় পড়ে যায় দাস পার্টি। সঙ্গীদের জীবন বাঁচাতে স্থান ত্যাগের নির্দেশ দেন জ্যোতি। সহযোদ্ধাদের পালানোর সুযোগ করে দিয়ে মরনপন লড়াই চালিয়ে যান জগৎজ্যোতি ও তার সহযোদ্ধা ইলিয়াস। হঠাৎ করে ইলিয়াসও গুলিবিদ্ধ হন। নিজের মাথার গামছা খুলে জ্যাতি ভালো করে বেঁধে রক্তপড়া বন্ধ করেন ইলিয়াসের। ইলিয়াস পালানোর প্রস্তাব দেন। গর্জে ওঠে জগৎজ্যোতির বীরকন্ঠ।
তেজোদীপ্ত সুরে বলেন- ‘পালাবো না, সবকটাকে শেষ করে তবে যাবো।’ একাই ১২ জন পাকসেনাকে খতম করে দেন জ্যোতি। বিকেল পৌনে পাঁচটা। জ্যোতির অস্ত্রভান্ডার শূন্য। তবু পিছু ফিরছেন না। এমন সময় আচমকা একটা বুলেট বিদ্ধ হয় জ্যোতির শরীরে। জগৎজ্যোতি শেষবারের মতো চিৎকার করে ওঠেন- ‘আমি যাইগ্যা’।


মৃত জগৎজ্যোতিতেও ভীত রাজাকারেরা
জগৎজ্যোতির নিথর দেহকেও রেহাই দেয়নি পাক হায়েনাদের দোসররা। আজিমিরিগঞ্জ বাজারে যেদিন জ্যোতির লাশ আনা হয় সেদিন ছিলো ঈদের বাজার। বীর সেনার লাশ দেখতে শত শত লোক জড়ো হন বাজারে। মুক্তিযোদ্ধার পরিণতি দেখানোর জন্য জ্যোতির নিথর দেহ রাজাকাররা বেঁধে ফেলে ইলেকট্রিক খুঁটির সাথে। ধারালো অস্ত্র দিয়ে খুঁচাতে থাকে জ্যোতির শরীর। তবিত করার পর বিবস্ত্র করা হয় এই প্রয়াত সেনাপতিকে। সদলবলে জ্যোতির গায়ে থু থু ফেলে রাজাকারের দল। এই বিভৎসতার স্মৃতি ধরে রাখতে এক দালালকে দিয়ে সেই ছবিও তুলানো হয়।
এইখানেই থামে না রাজাকাররা। জগৎজ্যোতির মা-বাবাকে নিয়ে জ্যোতির বিভৎস লাশ দেখিয়ে তারা বিকৃত আনন্দ উপভোগ করে। লাশ নিয়ে যখন পুরো পরিবারে কান্নার রোল উঠেছে তখন রাজাকারেরা আগুন ধরিয়ে দেয় জগৎজ্যোতিদের বসত ভিটায়। এরপর জগৎজ্যোতিকে ভাসিয়ে দেয়া হয় ভেড়ামোহনা নদীর জলে। এভাবেই ঘটে দেশ মাতৃকার শ্রেষ্ঠতম সন্তানটির ভাসানযাত্রা।


সর্বোচ্চ খেতাবের ঘোষণা
যুদ্ধ ক্ষেত্রে জ্যোতির শহীদ হবার সংবাদ স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র, অল ইন্ডিয়া রেডিওসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচারিত ও প্রকাশিত হয়। সেই সাথে তার বীরত্বগাঁথা তুলে ধরা হয় বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে। অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকার তাকে সর্বোচ্চ মরণোত্তর পদক প্রদানের ঘোষণা করেন। প্রথম ব্যক্তি হিসেবে জগৎজ্যোতিকে মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পদক প্রদানের ঘোষণা সে সময় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে প্রচারিত হয়। এই ঘোষণায় অনেক মুক্তিযোদ্ধাই উদ্‌ভুদ্ধ হয়েছিলেন, সাধুবাদ জানিয়েছিলেন সরকারকে।
জগৎজ্যোতিকে মরনোত্তর সর্বোচ্চ পদক প্রদানের ঘোষণা দিয়েও সে প্রতিশ্রুতি থেকে অজ্ঞাত কারণে সরে আসে সরকার। পরবর্তীতে ১৯৭২ সালে বীরবিক্রম খেতাবে ভূষিত করা হয় তাকে। এই পুরস্কারও বাস্তবে প্রদান করা হয় আরো দু’যুগ পর। কেন ঘোষনা দিয়েও জগৎজ্যোতিকে প্রদান করা হলো না মরনোত্তর সর্বোচ্চ খেতাব- এই প্রশ্নের উত্তর আজো অজ্ঞাত। জগৎজ্যোতির সহযোদ্ধা আর মুক্তিযোদ্ধাদের গবেষকরাও আজও খুঁজে বেড়ান এই প্রশ্নের উত্তর। তাদের নানা লেখায় প্রকাশ পেয়েছে এ নিয়ে ক্ষুভ।
মুক্তিযোদ্ধা, সাংবাদিক সালেহ চৌধুরী ‘একাত্তরের দিরাই-শাল্লা’ প্রবন্ধে লিখেছেন- ‘জগৎজ্যোতির প্রতি বাংলাদেশ সরকার তার প্রতিশ্রুতি রাখেনি। ··· স্বাধীনতার পর সরকার জ্যোতিকে সর্বোচ্চ খেতাব দেয়নি, সর্বোচ্চ খেতাব মুক্তিযুদ্ধের একটি বিশেষ অংশের জন্য সীমাবদ্ধ রয়ে গেলো। সরাসরি সশস্ত্রবাহিনীর না হলে সর্বোচ্চ খেতাব দেয়া যাবে না। অতএব জগৎজ্যোতিও বাদ। ওতে কিছু যায় আসেনি। জ্যোতিরও কোন ক্ষতি হয়নি। স্বাধীনতার জন্য জীবন উৎসর্গকারী জগৎজ্যোতিরা অমর। তাদের কীর্তি অয় অবিস্মরণীয়।’


শহীদের তালিকায়ও নেই জ্যোতির নাম
স্বাধীনতার পর আজমিরিগঞ্জ উপজেলার নাম জগৎজ্যোতিগঞ্জ করার প্রস্তাব দেন স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা। পরবর্তীতে স্বাধীনতা বিরোধীদের বিরোধীতায় তা সম্ভব হয় নি। যদিও সুনামগঞ্জের পৌর পাঠাগারের নাম রাখা হয় জগৎজ্যোতি পৌর পাঠাগার নামে। তবে জগৎজ্যোতির নিজ জেলা হবিগঞ্জের স্মৃতিস্তম্ভে শহীদদের তালিকায়ও নাম নেই জগৎজ্যোতির। তাতে অবশ্য কিছু আসে যায় না জগৎজ্যোতির পরিবারের। যাদের নিজেদের থাকারই জায়গা নেই, খাওয়ার নিশ্চয়তা নেই- কার কোথায় নাম আছে তা নিয়ে ভাবার সময় কই এদের! জগৎজ্যোতির পিতা মাতা গত হয়েছেন। বড় ভাইও স্বর্গবাসী। এখন কেবল বৌদি আর ভাতুস্পুত্ররা আছেন। শহীদ জগৎজ্যোতি দাসের ভাতুস্পুত্র দুলালচন্দ্র দাস বলেন, জাতীয়ভাবে যেমন জগৎজ্যোতি দাসের সঠিক মূল্যায়ন করা হয়নি। তেমনি স্থানীয় ভাবেও তার মূল্যায়ন কেউ করেনি। তিনি বলেন, গত আ’লীগ শাসনামলে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত হবিগঞ্জে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যদের জন্য বরাদ্দকৃত জায়গায় আমাদের পরিবারকে বসবাসের জন্য একখন্ড জমি দেয়ার অঙ্গিকার করলেও তা আজও বাস্তবায়িত হয়নি।


অনন্য মুক্তিযোদ্ধা জগৎজ্যোতি
শহীদ জগৎজ্যোতির অমর বীরত্বগাথা আর বঞ্চনার কাহিনী নিয়ে এবারের বই মেলায় প্রকাশিত হয়েছে ‘অনন্য মুক্তিযোদ্ধা জগৎজ্যোতি’ বইটি। বইটি লিখেছেন সাংবাদিক অপূর্ব শর্মা। সাহিত্য প্রকাশ থেকে প্রকাশিত হয়েছে এটি। জগৎজ্যোতিকে নিয়ে বইটি লেখা হলেও আবশ্যিকভাবে ওঠে এসেছে সিলেট অঞ্চলের যুদ্ধদিনের কাহিনী। বীর সেনাদের বীরত্বগাঁথা আর রাজাকারদের পৈশাচিকতার গল্প। ইতিহাসধর্মী বইগুলোর চাইতে এই বইটির ব্যতিক্রম হলো ‘অনন্য মুক্তিযোদ্ধা জগৎজ্যোতি’ বইটি সুখপাঠ্য ও প্রাঞ্জল। এই প্রতিবেদনের তথ্যগুলো অপূর্ব শর্মা’র অনন্য মুক্তিযোদ্ধা জগৎজ্যোতি বইটি থেকে সংগৃহীত।



সংশপ্তক মুক্তিযোদ্ধা জগৎজ্যোতি আমাদের ক্ষমা করুন!
বীরশ্রেষ্ঠ নিয়েও চলেছে প্রতিশ্রুতিভঙ্গের খেলা
তর্পন


ভাস্কর চৌধুরীর লেখাটি পড়ে জগৎজ্যোতির সম্মন্ধে জানতে আগ্রহী হয়ে উঠি। বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছিল যে আমাদের বীরশ্রেষ্ঠ উপাধী থেকে প্রতিশ্রুতিভঙ্গ শুরু। স্বাধীন বাংলা বেতারে প্রচারিত প্রতিশ্রুতিতে এই মুক্তিযোদ্ধাকে বীর শ্রেষ্ঠ ঘোষণার কথা বার বার বলা হলেও মাত্র কয়েক মাস পরে '৭২ এর ৬ এপ্রিল প্রথম গেজেটে একমাত্র বীরশ্রেষ্ঠ উপাধী পায় মুন্সী আবদুর রউফ । বলাবাহুল্য ৩ জনকে বীরউত্তম, ১৪ জনকে বীরবিক্রম এবং ২৫ জনকে বীরপ্রতীক হিসেবে ঘোষণা দেয়া হলেও জগৎজ্যোতির দুরের কথা কোন গণ মুক্তিবাহিনীর যোদ্ধা এতে ছিল না । কেন? তবে কী এখানে অলিখিত বিধান ছিল যে জগৎজ্যোতির মত গণবাহিনীর সংশপ্তক যোদ্ধারা যতই বীরত্ব প্রদর্শণ করুক তাদের জন্য রাষ্ট্রীয় উপাধী প্রযোজ্য নয়? পরবর্তীতে ১৯৭৩ সালের ৬ ডিসেম্বর ৬ জন বীরশ্রেষ্ঠের নাম যুক্ত হয়। দেখা যায় জিয়া সহ সর্বমোট ৬৮ জন বীরউত্তম খেতাব পায় । কাদের সিদ্দিকী সহ মাত্র ২ জন আসে গণবাহিনী থেকে! (সুত্র: বীরশ্রেষ্ঠ , বীরউত্তমবীরবিক্রম , এবং বীরপ্রতীক দের তালিকা)।

জগৎজ্যোতি কে বীরশ্রেষ্ট উপাধি দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সংগঠক বেলাল মোহাম্মদ জানান, শহীদ জগৎজ্যোতিকে বীরশ্রেষ্ট খেতাব দেওয়ার ঘোষনা দেওয়া হয়েছিল একাধিকবার এবং তার বীরত্বগাথা প্রচার হচ্ছিল সম্মানের সঙ্গে। জাতির অস্তিত্ব রক্ষার এই যুদ্ধে জগৎজ্যোতির প্রত্যুতপন্নমতিত্ব, প্রাকৃতিকভাবে যোগাযোগ বিচ্ছন্ন দায়িত্বরত এলাকায় নতুন নতুন রণকৌশল ও দুঃসাহসী সফল অপারেশনের কারণে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে একাধিকবার তার বীরত্বগাঁথা প্রচার হচ্ছিল সম্মানের সঙ্গে। আর একারণে তার প্রতি চরম ক্ষুদ্ধ ছিল পাক হায়েনারা।

জগৎজ্যোতি দাস বীরবিক্রম
’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে ভাটি বাংলার গেরিলা বাহিনীর কমান্ডার ছিলেন শহীদ মুক্তিযোদ্ধা জগৎজ্যোতি দাস। বাবা মা আদর করে ডাকতেন শ্যাম নামে। যদিও কোন কোন তথ্যে সে কোন উপাধি পায় নি কিন্তু বীর বিক্রমদের তালিকা অনুযায়ী সেক্টর ৫ থেকে তাকে বীরবিক্রম উপাধী দেয়া হয় ।

কমিউনিষ্ট আদর্শে দিক্ষিত হলেন
হবিগঞ্জ জেলার আজমিরীগঞ্জ উপজেলার জলসুখা গ্রামের জীতেন্দ্র দাসের কনিষ্ঠ পুত্র জগৎজ্যোতি। শৈশব থেকে জ্যোতি শান্ত স্বভাবে হলেও ছিলেন প্রতিবাদী, জেদি, মেধাবী ও সাহসী । স্কুল জীবনেই জ্যোতি আইয়ুববিরোধী আন্দোলনে অংশ নেন। ১৯৬৮ সালে ম্যাট্রিক পাস করার পর সুনামগঞ্জ কলেজে ভর্তি হয়ে ছাত্র ইউনিয়নে যোগ দেন এবং তেজোদীপ্ত, বিপ্লবী ও স্পষ্টভাষী ছাত্র নেতা হিসেবে তিনি পরিচিত হয়ে ওঠেন । ১৯৬৯ সালে আইয়ুব বিরোধী আন্দোলনে অংশ নিয়ে বিশেষ দায়িত্ব পালনে ভারতের গৌহাটির নওপং কলেজে ভর্তি হন। সেখানে অবস্থানকালে অনেকগুলো অঞ্চলের ভাষা আয়ত্ব করেন এবং ধীরে ধীরে নকশাল পন্থীদের সঙ্গে জড়িত হন। এখানে অস্ত্র গোলাবারুদ সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারনা নিয়ে আবার দেশে ফিরে আসেন।

যুদ্ধ শুরু হলো
’৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে যখন সশস্ত্র সংগ্রাম শুরু হয় । পাকবাহিনীর বর্বরোচিত হামলা ও নৃশংস হত্যাকান্ডের বিরুদ্ধে রূখে দাড়ানোর জন্য সিদ্ধান্ত নেন জগৎজ্যোতি । যোগ দেন ভারতের মেঘালয় রাজ্যের ইকো-১ ট্রেনিং ক্যাম্পে। বাংলার ভাটি অঞ্চলের সুনামগঞ্জ-কিশোরগঞ্জ-নেত্রকোনা এবং হবিগঞ্জের হাওরাঞ্চল নিয়ে গঠিত হয় মুক্তিযুদ্ধের ৭ নং সেক্টর। এ সেক্টরের কমান্ডারের দায়্ত্বি পান তৎকালীন মেজর শওকত আলী। ৭ নং সেক্টরকে কয়েকটি সাব-সেক্টরে বিভক্ত করা হয়। এর মধ্যে টেকেরঘাট সাব-সেক্টরের দায়্ত্বি দেওয়া হয় বর্তমান বিশিষ্ট নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্তকে। তার অধীনেই প্রথমত জগৎজ্যোতি বিভিন্ন আক্রমণে অংশগ্রহণ করেন। তার নেতৃত্বে প্রশিক্ষিত চৌকস যোদ্ধাদের নিয়ে গঠিত হয় গেরিলা দল, যার নাম দেওয়া হয় ফায়ারিং স্ট্কোয়াড ‘দাস পার্টি’।

কয়েকটি সফল অপারেশন
জগৎজ্যোতি ইংরেজি, হিন্দি, গৌহাটির আঞ্চলিক ভাষায় পারদর্শী হওয়ার সুবাদে ভারতীয় মিত্র বাহিনীর সঙ্গে তার যোগাযোগ সহজতর হয় । এর ফলে দাস পার্টির জন্য ভারতীয় মিত্র বাহিনীর জগৎজ্যোতি আধুনিক অস্ত্র ও গোলাবারুদ সংগ্রহে সমর্থ হন । দাস পার্টির উল্লেখযোগ্য একটি অপারেশন ছিল পাকবাহিনীর বার্জ আক্রমণ । ’৭১-এর ১৬ অক্টোবর পাকবাহিনীর সেই বার্জটিতে আক্রমণ চালিয়ে বার্জটি নিমজ্জিত করে। দাস বাহিনীর গেরিলা অভিযানের মাধ্যমে পাকিস্তানী শত্রু ঘাঁটি ধ্বংস শুরু করে। পরবর্তীতে পাহাড়পুর অপারেশন, বানিয়াচংয়ে কার্গো বিধ্বস্ত করা, বানিয়াচং থানা অপারেশনসহ বেশ ক’টি ছোট বড় অপারেশন দাস পার্টির যোদ্ধারা সফল ভাবে সম্পন্ন করে।

বদলপুর অপারেশন
বদলপুর অপারেশন ছিল মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে একটি একটি বিশাল সাফল্য । জগৎজ্যোতির সঙ্গে ছিল বানিয়াচংয়ের মোহাম্মদ আলী মমিন, আমির হোসেন, খালেক মাস্টার, হায়দারুজ্জামান খান ধন মিয়া, আজমিরীগঞ্জের রাশিদুল হাসান চৌধুরী কাজল, মতিউর রহমান, নিত্যানন্দ দাস, ইলিয়াছ চৌধুরী, আঃ রশীদ, নিপেন্দ্র দাশ, ছাতকের আয়ুব আলী, আঃ মজিদ ও দিরাই উপজেলার আহবাব হোসেন এবং নীলু। জগৎজ্যোতির দল আজিমিরীগঞ্জ, মারকুলি, গুঙ্গিয়ারগাঁও প্রভৃতি অঞ্চলে শত্রু ঘাঁটি ধ্বংস করে দেয়। বদলপুরে শত্রুসেনারা দাস পার্টির প্রতিরোধের মুখে পাকসেনারা শক্তি বৃদ্ধি করতে বাধ্য হয়। গুলি ছোড়ার জন্য হেলিকপ্টারও ব্যবহার করা হয় । রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে জগৎজ্যোতি র পাশে ছিল ইলিয়াস নামে আরেকজন অসীম সাহসী যোদ্ধা।

শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত লড়ে গেলেন
পাক ক্যাম্প থেকে মাত্র ২০০ গজ দুরে রাজাকার/পাক সেনাদের আক্রমণে ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ে দাস পার্টি। রণাঙ্গণে পরিস্হিতির ভয়াবহ চিন্তা করে এক পর্যায়ে জ্যোতি তার দলকে ফিরে যাবার নির্দেশ দিয়ে একটি মাত্র এলএমজি নিয়ে নিজে একাই যুদ্ধ চালিয়ে যাবার সিদ্ধান্ত নেন । এজন্য জ্যোতি সহযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী মমিনকে নির্দেশ দেন যাতে অন্যরা তাদের জীবন বাঁচিয়ে নিরাপদ স্হানে সরে যায় । এরপর দল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে থাকেন মাত্র দুইজন, জ্যোতি ও ইলিয়াছ। সুস্হির এবং দৃঢ় মনোবলের সঙ্গে তারা যুদ্ধ করতে থাকে একটানা কিন্তু হঠাৎ ইলিছাস পাঁজরে গুলিবিদ্ধ হন। জ্যোতি পিছু না হটে তার মাথার লাল পাগড়ি খুলে শক্ত করে ইলিয়াসের বুকে‌ এবং পিঠে বেঁধে দেয়, যাতে তার রক্তক্ষরণ থেকে যায়। ইলিয়াছ সেই অবস্হায় মেশিনগান নিয়ে ক্রমাগত গুলি ছুড়তে থাকে পাক হানাদারদের ওপর।

অবিশ্বাস্য হলেও তিন দিক থেকে আক্রমণ সত্ত্বেও দক্ষ যোদ্ধা জ্যোতির কাছে ভিড়তে পারেনি পাকসেনারা। যুদ্ধের এক পর্যায়ে ম্যাগজিন লোড করে শত্রুর অবস্থান দেখতে মাথা উঁচু করতে মুহুর্তে ১টি গুলি জগৎজ্যোতির চোখে বিদ্ধ করে( একটু সুত্র দাবী করে তার পাঁজর বিদ্ধ করে)। মেশিনগান হাতে উপুড় হয়ে পাশের বিলের পানিতে নিশ্চল হয়ে ঢলে পড়েন জ্যোতি ।

জনসমক্ষে ঝুলিয়ে রাখা হলো
রাজাকারেরা রাতে জ্যোতির মৃতদেহ (একটি সুত্রে বলা হয় তিনি তখনও বেঁচে ছিলেন) খুজে পেয়ে পাকবাহিনীকে খবর দেয় । তাকে আজমিরীগঞ্জ বাজারে নিয়ে যায়। রাজাকাররা জ্যোতি হত্যার ঘটনা ছড়িয়ে দিয়ে সাধারণ মানুষকে ভয় দেখানোর জন্য তার দেহ কে আজমিরীগঞ্জ গরুর হাটে একটি খুঁটির সঙ্গে ঝুলিয়ে দেয়া হয়। তারপর চলে মৃতদেহ অবমাননা । একটি সুত্র দাবী করে জ্যোতি তখনও জীবিত ছিল এবং তাকে অমানুষিক নির্যাতন করে মেরে ফেলা হয় । হাফপ্যান্ট ও গেঞ্জি পরা জ্যোতির নিথর দেহটি কোন সৎকার ছাড়া ঝুলিয়ে রেখে পরে একসময় ভাসিয়ে দেওয়া হয় কুশিয়ারা নদীতে। কিন্ত্ত তার সহযোদ্ধারা তার মৃত্যুতে পিছু হটেনি । জগৎজ্যোতি ছিল তাদের কাছে জীবনের বিনিময়ে দেশের জন্য যুদ্ধ করার এক অনন্য দৃষ্টান্ত । জগৎজ্যোতির বীরত্বপূর্ণ যুদ্ধের কাহিনী সিলেটের সেই অঞ্চলের মানুষের কাছে এখনে মুখে মুখে ফেরে ।

বিস্মৃতির অতলে জগৎজ্যোতি
ছিটে ফোটা দু একটি লেখা ছাড়া খুব কমই আলোচনায় এসেছে এই মহান বীর । মইদুল হাসানের "মূলধারা একাত্তরে" পড়েছিলাম আওয়ামীলীগের একটি অংশ ছাত্রইউনিয়ন সহ দলের বাইরের কোন মুক্তিযোদ্ধাদের স্বীকৃতির পক্ষে ছিল না ।

জগৎজ্যোতির কমান্ডার সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত দেশের ক্ষমতাশীল দলের কান্ডারীদের একজন হয়ে তার ভাগ্য বদলেছেন । চ্যানেল আইতে তৃতীয় মাত্রা সহ একাধিক টিভি অনুষ্ঠানে তাকে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণ করতে দেখেছি ।কিন্তু এই যোদ্ধার নাম ভুলেও বলতে দেখিনি । হয়তো পুরনো কাহিনী বলে সবাই ভুলে গেছে ।


সূত্র:

ক. ভাটিবাংলায় মুক্তিযুদ্ধ এবং দাস পার্টি , রাশেদ আহমেদ খান, দৈনিক সমকাল, ৮ ডিসেম্বর ২০০৬।
খ. মুক্তিযুদ্ধে সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজের শহীদ তিন ছাত্র মুক্তিযোদ্ধা জগৎজ্যোতিদাস, তালেব ও গিয়াস

No comments: