Thursday, May 14, 2009

যুক্তির ফ্যালাসি, কুযুক্তি বা নষ্টামিসমূহ by দুরের পাখি

ব্লগে অনেকদিন অবস্থানের ফলে অনেক রকমের চিন্তা-চেতনার মানুষের লেখা দেখলাম । কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেখলাম যুক্তি নিয়ে কথা বলে গলা ফাটিয়ে শেষে দেখাগেলো এমন এক যুক্তি নিয়ে আসলেন যেটা নষ্টামি ছাড়া আর কিছু নয় । কিন্তু একই রকমের অন্য কিছু ব্লগারের সমর্থন পেয়ে ভাবতে থাকেন যে বিশাল একটা যৌক্তিক লড়াই জিতে গেছেন।

যুক্তির ফাঁক-ফোকরগুলা সম্পর্কে অনেক সময়ই দেখা যায় , যুক্তিদাতা নিজেই সচেতন নন । যেটা পরে তাকে ব্যাখ্যা করলে বুঝতে পারেন কি ভুল ছিল, সেটা কেউ ব্যাখ্যা করে না বলে এড়িয়ে যান, এবং পরবর্তীতে কেউ সেটা চোখে কুড়াল মেরে দেখিয়ে দিলেই টের পান । কিন্তু আগে যে একই রকম ভুল যুক্তি দিয়ে এসেছেন, সেটার কথা কজনেরই বা মনে থাকে ।

পাঠক-সমর্থক যারা তাদের কথা তো বলাই বাহুল্য । সাধারণত আমরা অন্যের মুখে যা শুনতে চাই তা শুনতে পাবার পরে সেটার যৌক্তিক বৈধতা নিয়ে আর ভাবি না । ভাবার পরে হয়ত দেখা যায়, সেটা ভুল ছিল । কিন্তু খুব কম লোকেরই সে পরিমান ডিসেন্সি থাকে নিজের মতামতের পক্ষে দেয়া যুক্তি যে ভুল যুক্তি সেটা বলার । আমি নিজেও অনেকসময়, এই দোষে দুষ্ট ।

যাই হোক, কয়েকটি পর্বে আমি চেষ্টা করব সাধারণ যৌক্তিক নষ্টামি ভা ভুল যুক্তিগুলা নিয়ে আলোচনা করার ।

১ : স্ট্র ম্যান ফ্যালাসি (কুশপুত্তলিকা নষ্টামি) :

এটি হচ্ছে প্রতিপক্ষের অবস্থান কে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করে, সে বিকৃত অবস্থানের বিপক্ষে যুক্তি দেখিয়ে, প্রতিপক্ষের আসল অবস্থানের বিপক্ষে যুক্তি দেখানো হয়েছে বলে আত্নপ্রসাদ লাভ করা ।

উদাহরন : নাস্তিকরা ঈশ্বরকে বিশ্বাস করে ঠিকই কিন্তু মদ খাবার জন্য, অবৈধ যোন সম্পর্কে চালিয়ে যাবার জন্য ধর্মের আচার মানতে চায় না ।

এটি একটি ভুল যুক্তি ।এটি বেশ উপভোগ্য হয়, কারন ঈশ্বরে বিশ্বাস করেও কেউ যদি খারাপ কাজ করার জন্য কেবল একটি সত্যকে অস্বীকার করে, তাকে হিপোক্রেট বলে বেশ দু'কথা শুনিয়ে দেয়া যায় ।

কিন্তু তারপরও এটি একটি কুযুক্তি, কারন আলোচ্য নাস্তিক যে ইশ্বরে বিশ্বাস করে, এটি একটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ধারনা । যেটা কেবল তার অবস্থানকে বিকৃত করার জন্য উপস্থাপন করা ।

কিন্তু কোনো নাস্তিক যদি তার এই অবস্থান স্বীকার করে নেয়, তাহলে ভিন্ন কথা ।

২ : এড হোমিনেম (গালিবাজি করে যুক্তি প্রতিষ্ঠা )

এটি খুবই কমন একটি কুযুক্তি, মোটামুটি সবাই কমবেশী ব্যাবহার করে । প্রায় সব মতের লোকই । প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে ব্যাক্তিগত বিষোদগার করে, অর্থাৎ গালিবাজি করে , পরে তাকে পরাজিত করা হয়েছে ভাব দেখানোটাই হল এড হোমিনেম ।

উদাহরন : কোন জামাতি এসে বল্ল, মূর্তি বানানো তো নিষেধ করা আছে এছলামে তাহলে মূর্তি ভাঙার বিরুদ্ধে কথা বলা কেন । সে যেহেতু ব্লগে পরিচিত জামাতি তখন সাধারনভাবে সবাই হইহই করে তাকে বেশ কিছু গালাগালি করে তাড়িয়ে দেবে । কিন্তু এটা তার আলোচ্য বিষয়টাকে মোটেও স্পর্শ করে না । অর্থাৎ তার যুক্তি তখনো ভ্যালিড ।

আবার কোনো পরিচিত তাবলীগি এসে রাজনীতি বিষয়ে তার ধারনা দিলে, তখন নাস্তিকরাও এই এড হোমিনেম ব্যাবহার করে থাকে ।

এড হোমিনেম নিয়ে একটু প্যাঁচ আছে একটা জায়গায় । সেটা হল একটা ভ্যালিড যুক্তির সাথে কিছু গালি যোগ করা হলে, সেটা খারাপ হতে পারে কিন্তু তা কখনো যুক্তিটাকে ইনভ্যালিড করে না ।

যেমন কোনো জামাতি যদি একাত্তরে নিজামীর ভূমিকা নিয়ে কুযুক্তি দেখাতে গেলে, তাকে একাত্তরে পত্রিকা থেকে নিজামীর নষ্টামির প্রমান দেখানোর সাথে সাথে এক-ট্রাক গালি দেয়া হলেও , নিজামীর নষ্টামির যুক্তি ঠিকই থাকবে । সেটা গালির কারনে বাতিল হয়ে যাবে না ।

৩ : টু কুওকুই (তুইও তো )

রফিক আর শফিকের মধ্যে কথা হচ্ছে ।
রফিক : তুই চুরি করিস, তুই একটা খারাপ লোক ।
শফিক : তুইওতো করিস ।
রফিক : (আমতা আমত করে) হ, চুরি করা আসলে তেমন খারাপ না ।

আলোচ্য দোষটি প্রতিপক্ষের মধ্যে থাকলেই, কাজটি বৈধ হয়ে যাবে না । প্রতিপক্ষের আঙুল তোলার বিরুদ্ধে বলা যেতে পারে । কিন্তু কাজটির বৈধতা অবৈধতার সাথে এর কোনো সম্পর্ক নাই ।

এছলামে, নারীর অবস্থান নিয়ে কথা বলার সময়, প্রায়ই তার কেরেস্তান, হিন্দু, ইহুদি বিভিন্ন ধর্মে নারীর অবস্থা যে আরো শোচনীয় সেটার ফিরিস্তি দেয়া শুরু করে ।

অন্য ধর্মে নারীকে কিভাবে ট্রিট করা হচ্ছে, সেটা কোনোভাবেই এছলামের অবস্থানকে ভ্যালিড করে না । এটি একটি ধ্রুপদী টু কুওকুই কুযুক্তি ।

৪ : সার্কুলার লজিক (কুযুক্তির দুষ্টচক্র)

সাইফুল যে ভুতের গল্পটা কইছে, আমার মনে হয় সত্য কথাই কইতাছে । কারন ওরে আমি অনেকবার কসম কাইটা কইতে কইছি, তখনো সে একই কথা কইল ।

যে প্রস্তাবনা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে, তার ধর্ম বা সেটা কি বলে, প্রস্তাবনার যৌক্তিকতার সাথে তার কোনো সম্পর্ক নাই । কোরানে কোনো ভুল নাই, কারন কোরানে স্বয়ং আল্লাহ-পাক বলেছেন যে এটা কোনো ভুল থাকতে পারে না ।

এখানে যে বইয়ের বৈধতা নিয়ে আলোচনা । সে বইয়ে তার নিজের বৈধতা নিয়ে কোনো কিছু থেকে থাকলেও তা তার বৈধতার প্রমানে ব্যাবহার করা যাবে না । কারন বইয়ের ভিতরে কি লেখা আছে সেটা যে সত্য সেটা এখনো প্রমান হয় নাই ।

কিন্তু তার বৈধতা ছাড়া অন্য বিষয়ে সে কি লিখেছে সেটা তৃতীর ব্যাবস্থার মাধ্যমে চেক করা যেতে পারে ।

কোরানের উৎস, তার বৈধতা নিয়ে, কোরান নিজে কি বলেছে সেটার কোনো মূল্য নেই । চোরকে জিজ্ঞেস করা তুই কি চুরি করেছিস, এর মত ।

৫ : বার্ডেন অফ প্রুফ (প্রমানের বোঝা)

এটি বহুল প্রচলিত একটি ধ্রুপদি কুযুক্তি । ঈশ্বরযে নাই সেটা প্রমান করে দেখানোর আগ পর্যন্ত ঈশ্বর আছে সেটা মানতে হবে ।

এটি কুযুক্তি । কারন , প্রশ্নকর্তার প্রশ্নই পুরোপুরি বোধগম্য নয় । তার প্রশ্ন পুরোপুরি বোধগম্য করতে হলে, প্রশ্নের প্রতিটি শব্দের ব্যাখ্যা ঠিকমত দিতে হবে তাকে ।

--ঈশ্বর যে নাই সেটা প্রমান কর
-ঈশ্বর কে/কি?
--এই দুনিয়ার সৃষ্টিকর্তা, পালনকর্তা ........
-কোথায় থাকেন, কি করেন ?

সেটাই তো প্রমান করা হচ্ছে ।

এইখানেই ফ্যালাসিটি বিবস্ত্র হয়ে পড়ে ।

৬: রেড হেরিং (আজাইরা প্যাচাল)

আলোচ্য বিষয়ের সাথে সম্পর্কবিহীন একটি ইস্যু তুলে, মূল আলোচনাকে অন্যদিকে ডেভিয়েট করে, সে আলোচনার জিতে, আলোচ্য বিষয়ের উপর আলোচনায় জেতা হয়েছে বলে ভাব-দেখানো ।

ঈশ্বরের অস্তিত্ত নিয়ে প্রমানভিত্তিক আলোচনায়, কমিউনিজমের ব্যার্থতা, এবং রাশিয়া যে একটি নাস্তিক দেশ হয়েও প্রচুর লোক হত্যা করেছে এইসব বিষয় নিয়ে এসে, বড়সড় লেকচার দেয়া ।

অথবা এছলামের অসহনশীলতা সংক্রান্ত কোরান হাদিসভিত্তিক আলোচনায় ইরাকে বুশ কি করেছে, আফগানিস্তানে বুশ কি করেছে এইসব ইস্যু তুলে, মোছলেমরাই যে বেশী সাফার করছে সেটা গলা চড়িয়ে তুলে ধরা । মোছলেমরা সাফার করছে, এটা অস্বীকার না করলেও, তার সাথে কোরান-হাদিস ভিত্তিক এছলামিক অসহনশীলতার কোনো সম্পর্ক নাই ।

অনেক ক্ষেত্রে অবশ্য কোনটা রেড হেরিং আর কোনটা রেড হেরিং নয়, সেটা নিয়ে একটু গোলমাল লাগতে পারে । যেমন, তুই মিথ্যা বলছিস এটা নিয়ে আলোচনায়, তুই সেদিন চুরি করে ধরা খাইছিস এর ব্যাপারটা পুরোপুরি রেড হেরিং নয় । যদি যে চুরি করে তার মিথ্যা বলার সম্ভাবনা বেশী হয় ।

৭: ফলস ডিলেম্মা (মিথ্যা দ্বন্দ )

প্রস্তাবনার বৈধতার জন্য, এমন দুটি অপশন ঠিক করে দেয়া, যারা একে অপরের বিপরীত নয়, বা তারাই একমাত্র অপশন নয়, তাদের ছাড়া অন্য অপশনও আছে ।

জামাতিরা সাধারনত নির্বাচনী প্রচারনায় এ কুযুক্তিটি ব্যাবহার করে । আপনি যদি এছলামের পক্ষে হন তাইলে আমাদের ভোট দিবেন । আর যদি বেলেল্লাপনা, মাদকাসক্তি, অর্থনৈতিক দুরাবস্থা এইসবের পক্ষে হন তাইলে অন্যদের ভোট দিবেন । জামতিদের ভোট দিলেই এগুলা দূর হবে, বা অন্যদের যে কাউকে ভোট দিলে এগুলা শুরু হবে তার কোনো ভিত্তি নাই ।

অথবা । ঈশ্বর আছে অথবা নাই, তার মানে আল্লাহ আছে অথবা নাই । ফিফটি-ফিফটি সম্ভাবনা । এটি একটি ফলস ডিলেম্মা কুযুক্তি, এবং প্যাসকেলের ওয়েজারের ভিত্তি ।

ঈশ্বর থাকলেই যে সেটা আল্লাহই হবে, বা কেবল একজনই হবে সেটার স্বপক্ষে কোনো যুক্তি বা প্রমান নাই । ঈশ্বর থাকলে অনেক রকমের হৈতে পারে , সেইক্ষেত্রে যেহেতু কোনটার স্বপক্ষেই নিশ্চিত প্রমাণ নাই, অতএব সবগুলার সম্ভাবনা সমার ধরতে হবে , ফলশ্রুতিতে একটা নির্দিষ্ট ঈশ্বরের জন্য সম্ভাব্যতার মান খুব ছোট হবে । ফিফটি-ফিফটি কোনমতেই নয় ।

৮ : প্যাসকেলের ওয়েজার (প্যাসকেলের বাজি)

এটি মূলত ফলস ডিলেম্মা বা মিথ্যা দ্বন্দ গুরুপের একটি কুযুক্তি । কিন্তু এর মাত্রাতিরিক্ত ব্যাবহারের কারনে একটি সম্পূর্ণ পোস্ট । হালের সিরিয়াস আলোচনায় এটি যে একটি কুযুক্তি তা সবাই স্বীকার করে নিয়েছেন । কিন্তু বাঙালী আসতেকদের কথা ভিন্ন ।

বিজ্ঞানী হিসাবে যারা প্যাসকেলকে চিনেন তাদের অনেকেরই ধারণা ওরকম একজন বিজ্ঞানী এধরনের আখাম্বা একটি ওয়েজার কিছুতেই দিতে পারেন না । অবশ্য প্যাসকেলের বিভিন্ন ডায়েরি/লেখা থেকে নিশ্চিতভাবে প্রমাণিত এইটা প্যাসকেলেরই কাম ।

ব্লগীয় নাস্তিকদের বিরুদ্ধে এড হোমিনেম এবং স্ট্র ম্যান (বিস্তারিত এইখানে ) কুযুক্তিতে ভরপুর একটি পোস্ট দিয়ে, কিছু মোসাহেবের হাততালি পেয়ে খুশিতে বগল বাজানো একজনের জবাবে এটা লেখা হয়েছিল মূলত।

প্যাসকেলের ওয়েজার সম্ভবত প্যাসকেলের জন্মেরও আগে থেকে ব্যাবহৃত হয়ে আসছে । এর মূল কথা হল

" ঈশ্বর থাকতেও পারেন, নাও থাকতে পারেন । কিন্তু ঈশ্বর আছেন এটা ধরে নেয়া সুবিধাজনক । কারন যদি ঈশ্বর নাই থাকেন তাহলে আস্তিক নাস্তিক দুজনেরই মরার পরে কোনো সমস্যা নাই । কিন্তু যদি ঈশ্বর থেকেই থাকেন তাহলে মরার পরে আস্তিক বেঁচে যাবেন কিন্তু নাস্তিক পড়বে ঝামেলায় । অর্থাৎ আস্তিকের বেঁচে যাবার সম্ভাবনা ১০০ ভাগ যেখানে নাস্তিকের বাঁচার সম্ভাবনা ৫০ ভাগ "

প্যাসকেলের নামের সাথে জড়ালেও এটি একটি কুযুক্তি । সাধারনভাবে কূপমন্ডুকদের খুব বেশী দেখা যায় এটি ব্যাবহার করতে, যারা তার নিজস্ব ঈশ্বরের বাইরে অন্য কোনো ধর্মের ঈশ্বরের কথা ভেবেই দেখেনা ।

এই কুযুক্তিটির স্বরুপ উম্মোচনে সাধারনভাবে গাণিতিক শব্দমালা ব্যাবহার করলে, অল্পকথায় বুঝানো যায় । কিন্তু আমি চেষ্টা করব ভারি শব্দ যথাসম্ভব কম ব্যাবহার করতে ।

দুইটি কারনে এযুক্তিটি একটি কুযুক্তি ।

কারন ১: যুক্তিটিতে কারন ছাড়াই ধরে নেয়া হয়েছে, যে ঈশ্বর একজন/একটি । এবং যে ব্যাক্তিটি বাজিটি ধরছে সে যেই ঈশ্বরে বিশ্বাসী সেটিই একমাত্র সম্ভাব্য ঈশ্বর । কোনোপ্রকারের ঈশ্বরের অস্তিত্তের পক্ষে যেহেতু কোনো পরীক্ষিত উপাত্ত নাই সেহেতু এই দুইটি প্রস্তাবনাই ভুল । ভুল প্রস্তাবনার উপরে দাঁড়িয়ে থাকা যুক্তিও কুযুক্তি ছাড়া আর কিছু নয় ।

বিভিন্ন ধর্মে এবং লোককাহিনীতে বিভিন্ন ঈশ্বরের কথা বলা আছে । তাদের প্রত্যেকের পক্ষে উপাত্ত সংখ্যা সমান । অর্থাৎ ০ টি । এখানে একটি নির্দিষ্ট ঈশ্বরের অনুসারিরা ছ্যাঁৎ করে উঠতে পারেন । তাদের ঈশ্বরের পক্ষে প্রমান ০ শূন্য নয় বলে । মিরাকল , চমৎকার আসমানী কেতাব এইগুলা হতে পারে সম্ভাব্য কারন ।কিন্তু এইগুলা যে একটি ঈশ্বরের ক্রাইটেরিয়া হবে তার কোনো কারন নাই । কারন ঈশ্বরের ক্রাইটেরিয়া কি হবে তার উপর মানুষের কোনো হাত নাই । অথবা বলা যায় ঈশ্বর নিয়ে এখনো কোন নিশ্চিত মডেল পাওয়া যায় নাই, যেটার স্বাপেক্ষে বিবেচনা করা হবে , তার ক্রাইটেরিয়া কি কি হতে পারে ।

যাই হোক ধরা যাক, মোট n সংখ্যক ঈশ্বরের কথা প্রস্তাবিত আছে পৃথীবিব্যাপী । n এর সর্বনিম্ন মান ১ (শূণ্য ঈশ্বরটাকেও একটা ঘটন সংখ্যা হিসাবে ধরে নিয়ে) । এখন একটি নির্দিষ্ট ঈশ্বরে বিশ্বাসী ব্যাক্তির পরিত্রানের সম্ভাবনা আপাতদৃষ্টিতে ২/n (যদি কোনো ঈশ্বর না থাকে, অথবা তার ঈশ্বরটিই সত্য হয় ।) যেখানে নাস্তিকের সম্ভাবনা ১/n ( কোনো ঈশ্বর নাই ) । অর্থাৎ আস্তিকের পরিত্রাণের সম্ভাবনা নাস্তিকের দ্বিগুন ।

কিন্তু n এর মান বড় হতে থাকলে, এই দ্বিগুন তখনও দ্বিগুন থাকলেও দুটো সংখ্যার পার্থক্য নাটকীয়ভাবে কমতে থাকে । এবং মোটামুটি বড় একটি n এর জন্য ১/n এবং ২/n অলমোস্ট সমান । পৃথিবীতে প্রচলিত ধর্মের সংখ্যা চার হাজারের বেশী । n = ৪০০০ ধরে নিলে আস্তিকের বাঁচার ০.০২৫% সম্ভাবনা , নাস্তিকের বাঁচার সম্ভাবনা ০% । আস্তিকের সুবিধা ০.০২৫ % বেশি । প্যাসকেলের ওয়েজারে প্রস্তাবিত সম্ভাবনার ২০০০ ভাগের একভাগ মাত্র ।

কিন্তু এই ক্ষুদ্র সুবিধাটিও ধোপে টিকে না, যখন আরেকটি সম্ভাবনার কথা স্বীকার করা হয় । প্রায় প্রত্যেক ধর্মেই, নিজটা সঠিক অন্যেরটা ভুল বলে গলাবাজি করা আছে । এখন একটা ভুল ঈশ্বরে বিশ্বাসীকে সত্যিকারের ঈশ্বর যদি শাস্তি দিয়ে থাকেন , তাহলে বিশ্বাসীর পক্ষে ঘটন সংখ্যা গিয়ে দাঁড়ায় (১+১-১)=১ ।
অর্থাৎ আস্তিক নাস্তিক দুইয়ের জন্যই বাঁচার সম্ভাবনা দাঁড়ায় ১/n, যা কারো জন্যই কম সুবিধার না, আবার কারো জন্যই বেশী সুবিধার না ।

কারন২ : ঈশ্বরের সঠিক প্রকৃতি নিয়ে মানুষে কিছু বলার নাই । ঈশ্বর যা নিজের ইচ্ছা হয় তাই করবেন । তাহলে ঈশ্বর তার অনুসারিদেরও শাস্তি দিতে পারেন, আবার তার যারা অনুসারি নয় তাদেরও শাস্তি দিতে পারেন । অসীম দয়ালু অসীম জ্ঞানী কেউ একজন, ঈশ্বরের মত বড় ব্যাপার নিয়া জুয়া খেলা একজনরে ফেভার না কৈরা, এভিডেন্স ভিত্তিক এপ্রোচ নেয়াটাকে ফেভারও করতে পারেন

এই দুইটি সম্ভাবনা যে সমান এটা কারো কারো মাথার সহজে নাই ধরতে পারে । কিন্তু বিবেচনা করুন, মানলে পুরস্কার দেয়া, না মানলে শাস্তি দেয়া এটা মানুষের বৈশিষ্ট । ধর্ম প্রচারকরা এটা ঈশ্বরের বৈশিষ্ট বলেও চালিয়ে দিতে চাচ্ছে । কিন্তু এর স্বপক্ষে কোনো পরীক্ষণলব্ধ প্রমান নাই ।

সুতরাং এই ক্ষেত্র আস্তিক নাস্তিক উভয়েরই স্বপক্ষে ঘটন সংখ্যা হবে ২ এবং উভয়ের জন্যই পরিত্রাণের সম্ভাবনা ২/n (০ ঈশ্বর অথবা অবিশ্বাসীদের পুরস্কৃতকারী ঈশ্বর, নাস্তিকের জন্য , ০ ঈশ্বর অথবা নিজ ঈশ্বর, আস্তিকের জন্য )

সুতরাং দুইটি পছন্দেরই সম্ভাবনা মূল্য সমান ।
প্যাসকেলের ওয়েজার একটি আখাম্বা ওয়েজার ।

এত প্যাঁচগোচের কথায় যাগো অস্বস্তি, তাগো লাইগা এককথায় কৈলে :

" আল্লা থাকলে বেহেশত, না থাকলে কিছু না, লসের কিছু নাই ভাইবা যারা বৈসা আছেন, যদি আল্লা না থাইকা শিব থাকে আর হেয় যদি মরার পরে কয় আমার লিঙ্গ থুইয়া তুই আল্লার ইবাদত করলি এখন এইটা তোরে সান্দানি হৈবেক , তখন ? "

৯ : আপিল টু অথরিটি (সাহেব কহিছেন, চমৎকার সে হতেই হবে) :

ঈশ্বর আছেন, কারন মহাবিজ্ঞানী আইনিসটাইনও ঈশ্বরের পক্ষে বলে গেছেন । এই জাতীয় কুযুক্তি-গুলাকে বলা যায় আপিল টু অথরিটি ফ্যালাসি । ঈশ্বরের অস্তিত্ত অনস্তিত্ত নিয়ে , একজন সাধারন মানুষের কথার চাইতে আইনিসটাইনের কথার বেশী কোনো মূল্যই নেই । তা তিনি যত বড় বিজ্ঞানীই হোন । কারন তিনি সেই ক্ষেত্রের বিজ্ঞানী নন । কিন্তু আইনিসটাইন যদি ফোটনের ধর্ম নিয়ে কোনো কথা বলে থাকেন, সেটিকে খুব বেশী না ঘাটিয়েও সত্য বলে মেনে নেয়ার একটু সুযোগ থাকে । কারন তিনি সেই ফিল্ডের বিশ্ববিখ্যাত বিজ্ঞানী ।

অবশ্য এই ক্ষেত্তে আরেকটি কুযুক্তি লক্ষ্যনীয় । আইনিসটাইন না হয় ঈশ্বরের অস্তিত্ত ফিল্ডের বিজ্ঞানী নন, কিন্তু অনেক বড় ধর্মতাত্বিক, এছলামি চিন্তাবিশারদরা যেহেতু বলছেন, তাদের কথার তো মূল্য থাকবে এ ক্ষেত্রে ।

না, তাদের কথারও মূল্য নেই । কারন অথরিটি বা কথার মূল্য প্রতিষ্ঠিত হয় পরিসংখ্যানিক উপাত্তের মাধ্যমে । একজন বড় বিজ্ঞানী বা গবেষক দীর্ঘ সময় ধরে সঠিক স্বিদ্ধান্ত দেয়ার রেকর্ড করার পরেই, পরবর্তিতে তার একটি স্বিদ্ধান্তকে একজন সাধারন মানুষের স্বিদ্ধান্তের চাইতে বেশী গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা হয় ।

ধর্মতাত্বিক, বা এছলামি চিন্তাবিশারদদের ব্যাপারটা সেরকম নয় । তারা আজ পর্যন্ত একটি ক্ষেত্রেও ঈশ্বরের অস্তিত্তের পক্ষে সন্তোষজনক উপাত্ত নিয়ে আসতে পারে নাই । অর্থাৎ তাদের গবেষণার শাখাটি এখনও একটি পরিশীলিত জ্ঞানের শাখা বলে স্বীকৃতি পাবার যোগ্য নয় । আগে তাদের গবেষণা ক্ষেত্রটি ফলাফল উৎপাদন করে, গ্রহনযোগ্য হতে হবে, তারপর তাদের অথরিটি । আর ফলাফল হতে হবে হার্ডকোর । কোনো হাদুমপাদুম জাতীয় , মনে করি একটি বেহেশতে ১০০ টা হুর আছে জাতীয় ফলাফল নয় । সিরিয়াস আলোচনায় ব্যাবহারযোগ্য, পুনরাবৃতিযোগ্য ফলাফল ।

শ্রোতার তুলনায় খুবই উচ্চস্তরের একজনের কথা বলে, শ্রোতার বিহ্বলতার সুযোগ নিয়ে, নিজ যুক্তি প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা । মডারেট, মডার্ন মোছলেমদের নিজ বিশ্বাসের, র‌্যাশনালাইযেশন করতে দেখা যায় এই যুক্তি দিয়ে ।

মাইকেল জ্যাকসন এছলাম গ্রহন করছে, অতএব এছলাম সত্য ধর্ম । খবরটি সত্য ধরে নেয়ার পরেও, মাইকেল জ্যাকসনের বরং এছলাম সম্পর্কে সাধারন মোছলেমদের চাইতেও কম জানার কথা । কম জেনে একজন একটা কাজ করেছে, এটাতে সেই কাজটার বৈধতা কোত্থকে আসে । সে বড় গায়ক ঐখান থেকে ?

১০ : নো ট্রু স্কটসম্যান (তোড়ায় বাঁধা ঘোড়ার ডিম)

এই কুযুক্তিটি সব ধর্মের লোকজনদের ব্যাবহার করতে দেখা যায় । বিশেষ করে কেরেস্তান এবং মোছলেমদের । কেরেস্তানদের ক্রুসেডের রক্তপাত ও নৃসংশতা নিয়ে আঙুল তোলা হলে তারা বলে, ঐ কেরেস্তানগুলা সত্যিকারের জেসাসের শিক্ষার উপর প্রতিষ্ঠিত কেরেস্তান ছিলো না । এইভাবে করতে করতে শেষ পর্যন্ত দেখা যায়, সত্যিকারে কেরেস্তান কেউ না, কেউ ছিলও না । তাইলে কেরেস্তান জীবন মানে যে ভালো জেবন এই যুক্তির ভিত্তি কি?

আবার মোছলেমদের যুক্তি এছলামি শাসন ব্যাবস্থা খুবই উন্নত শাসন ব্যাবস্থা , হেনতেন এইসব । যখন বলা হয়, কই এছলামি দেশগুলাতে তো শান্তি নাই, মানবাধিকার লংঘন, দারিদ্র, দুর্নীতি এগুলা এছলামিক দেশগুলাতেই তো বেশী , তখন বলে কুনো দেশেই সত্যিকারের এছলামিক শাসনব্যাবস্থা প্রতিষ্ঠিত নাই বইলাই এই ব্যাবস্থা ।

কবে কোথায় সত্যিকারে এছলামিক শাসনব্যাবস্থা প্রতিষ্ঠিত ছেল ? খুলাফে রাশেদ এর যুগে ছিল । বকর, ওমর, ওছমান আলীর যুগে । কিন্তু ওদের যুগেও তো ব্যাপক অশান্তি ছিল । বকরের আড়াই বছর গেল নিজের দেশের লুকের সাথে যুদ্ধ কর্তে কর্তেই, ওমরের দিন গেল বাইরের দেশে যুদ্ধ কর্তে কর্তে শেষে সে মারাই গেল আততায়ীর হাতে, ওছমান মারা গেল রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের হাতে গনপিটুনিতে , আলি খুন হইল কুফার মসজিদে, তাও রাজনৈতিক মোছলেম প্রতিপক্ষের হাতে যে প্রতিপক্ষ নিজেও মোহাম্মদের ছাহাবা । এইগুলা তো শান্তির নমূনা না ।

তখন পাল্টা যুক্তি আসে, ভাইরে এইগুলা তো মাইনষের ব্যার্থতা এইগুলার জন্য এছলামরে দুষ দিয়া তো লাভ নাই ।

ঠিক এইখানেই আবার স্ট্র ম্যান ফ্যালাসি শুরু হইল । মূল আলোচনাই শুরু হইল কিন্তু এছলামি শাসনব্যাবস্থার পক্ষে-বিপক্ষে , কিন্তু ঐখান থেকে ডাইভার্ট করে এছলামের সত্যতা-অসত্যতা সংক্রান্ত কুযুক্তিতে নিয়ে গেল ।

এই নো ট্রু স্কটসম্যান ফ্যালাসি কে ঘোড়ার ডিম ফ্যালাসি বলা যায় । ঘোড়ার ডিমের মতই, সত্যিকারের কেরেস্তান, সত্যিকারের এছলামিক শাসনব্যাবস্থা, সত্যিকারের মোছলেম এই জিনিসগুলা কেউ কখনো দেখে নাই, শোনে নাই । কিন্তু এইগুলার কাল্পনিক স্যাম্পল দেখিয়ে দেখিয়ে ধর্মের প্যাকেজগুলা বিক্রী করা হচ্ছে ।



১০ : নো ট্রু স্কটসম্যান (তোড়ায় বাঁধা ঘোড়ার ডিম)

এইটা নিয়ে আগের পর্বেও ব্যাখ্যা ছিল, কিন্তু বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নভাবে আমি এই কুযুক্তিটির মুখোমুখি এত বেশী হয়েছি যে, ব্যাখ্যা করে সবসময় একটু অতৃপ্তি থেকেই যায় ।

যাই হোক, এটি একটি বাইন মাছের মত পিছলে যাওয়া যুক্তি । ফলাফল ধরে কোনো মতবাদের সমালোচনা করতে গেলে যুক্তি দেয়া যে আলোচ্য ক্ষেত্রে মতবাদটি বিশুদ্ধরুপে প্রয়োগ করা হচ্ছে না, এতটুকু পর্যন্ত ঠিকাছে । কিন্তু একটি একটি করে ক্ষেত্র বিবেচনা করে গিয়ে শেষ পর্যন্ত যখন দেখা যায় কোনো ক্ষেত্রেই মতবাদটি ফলাফল উৎপাদন কর্তে পারে নাই, তখনও মতবাদটি ঠিক কিন্তু প্রয়োগে ভুল বলে বসে থাকাটাই হল ঘোড়ার ডিম ফ্যালাসি ।

এই পর্যন্ত প্রযুক্ত সব ক্ষেত্রে যে মতবাদ ব্যার্থ সেইটারে আঁকড়াইয়া ধইরা বইসা থাকার কোন কারণ নাই । এছলামি সুশাসন, কমিউনিজম এইগুলা এধরনের মতবাদের মধ্যে পড়ে ।

ব্যাপারটা এরকম, বিএনপি কি করছে সেটা দিয়ে নয় বরং বিএনপির গঠনতন্ত্রে কি আছে সেটা দিয়েই বিএনপিকে যাচাই করা উচিৎ । ওরকম করতে গেলে বাংলাদেশের কোনো দলকেই খারাপ বলার চান্স নেই । জামাত হওয়া উচিৎ সামান্যতম এছলামের ছিঁটেফোঁটা যাদের মধ্যে আছে তাদের ফেভারিট দল ।

১১ : আপিল টু কনসিকিউয়েন্স : (হায় হায় সব রসাতলে যাবে এবার, অথবা সত্যের মতো বদমাশ)

একটি সত্য বলে ধরে নেয়া ব্যাপার যদি মিথ্যা হয় তাহলে তার প্রভাব খুবই খারাপ হবে, অতএব ঐ সত্যটি কোনোভাবেই মিথ্যা হতে পারে না, জাতীয় কুযুক্তি হচ্ছে "রসাতলে যাবে সব" জাতীয় কুযুক্তি ।

ঈশ্বর নাই ধরে নিয়ে, ধর্ম না থাকলে লোকজন সব চুরি ডাকাতি লুটপাট ধর্ষণ রাহাজানি শুরু করবে এই ভয়ে ঈশ্বরের সিস্টেমটাকে টিকিয়ে রাখার পক্ষে যুক্তি শোনা যায় অহরহ । বিশেষ করে মডারেট মোছলেমদের পক্ষ থেকে । যারা যৌক্তিকভাবে ঐশ্বরিক ধারনাটিকে মেনে নিতে না পেরে, প্রতিক্রিয়া কি হবে সেটা ভেবে নিজেদের ভয় দেখিয়ে আবার এছলামের সুশীতল ছায়াতলে নিজেদের ফিরিয়ে আনেন । বা নিজেরা অতটা সিরিয়াসলি না মানলেও অন্যদের যে ঈশ্বরকে মানা দরকার আছে সেটা নিয়ে লেকচার দেন । তাদের আবার নিজ চরিত্রের উপর অগাধ আস্থা কিন্তু অন্যের চরিত্রের উপর আস্থা নাই বিন্দুমাত্র ।

প্রস্তাবিত প্রতিক্রিয়ার মডেলটি ঠিক না বেঠিক সে আলোচনায় না গিয়েই, এটি যে একটি আখাম্বা কুযুক্তি তা বোঝা যায় । সত্য কনসিকিউয়েন্স এর উপর নির্ভর করে না, বরং কনসিকিউয়েন্স তৈরী করে । সেটা কখনো খারাপ হয় কখনো ভালো হয় । সেখানে সত্যের বা সত্য আবিষ্কারকারীর কিছু করার থাকে না ।

ইউরেনিয়াম পরমানুকে নিউট্রন দিয়ে আঘাত করলে বিপুল শক্তি উৎপাদিত হবে, এর সাথে তার ফলশ্রুতিতে হিরোসিমা নাগাসাকিতে নরক নেমে আসা বা না আসার কি সম্পর্ক ?! হিরোশিমায় বোমা ফেলা হবে কি না হবে তারও কোটি কোটি বছর আগে থেকেই ইউরেনিয়াম পরমানুর ধর্ম ঐরকমই আছে ।

আমার ক্যান্সারের খবর যদি সত্য হয় তাহলে, আমার আম্মা শুনে মারাই যেতে পারেন, আমার পরিবারে ঝড় বয়ে যেতে পারে । কিন্তু এর উপর তো আমার ক্যান্সার হওয়া না হওয়া নির্ভর করবে না ।

১২ :আপিল-টু-পপুলারিটি দশে মিলি করি কাজ হারি জিতি নাহি লাজ)

একটি প্রস্তাবিত ধারনা বিপুল সংখ্যক জনগোষ্ঠীর মধ্যে সত্য বলে প্রচারিত, শুধু এই তথ্যের ভিত্তিতে ধারনাটিকে সত্য বলে যুক্তি দেখানো হচ্ছে, আপিল-টু-পপুলারিটি কুযুক্তি ।

ইনতারনেতের বিভিন্ন ফোরামে প্রায়ই এই কুযুক্তিটি দেখি । ১.৬ বিলিয়ন লোক যে কোরানকে সত্য বলে মানে তারা কি হুদাই মানে ? কোরান সত্য না হলে কি তারা মানত ? এই জাতীয় কুযুক্তি অহরহ ।

১.৬ বিলিয়ন লোকের মধ্যে ঠিক কত কোটি লোক তার একটা অক্ষর বুঝে সে হিসাবে না গিয়েও এটা একটা কুযুক্তি সেটা বোঝা যায় । সত্য কথা সাধারনভাবে অজনপ্রিয় হয়ে থাকে । মাত্র কয়েকশ বছর আগেও পৃথীবিব্যাপি সবাই বিশ্বাস করত পৃথীবিটা চ্যাপ্টা আর তারপাশে সূর্য ঘুরছে । কিন্তু সবার বিশ্বাস পৃথীবি সংক্রান্ত সত্যের ব্যাপারে কিছু করতে পারে নি । কেবল তার বের হয়ে আসাকে দেরি করাতে পেরেছে ।

এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে অনেক লোক-কাহিনী , লৌকিক বিশ্বাস, কুসংস্কার প্রচলিত আছে, যার বিশ্বাসীর সংখ্যা হিসাব করলে কোনো কোনো ক্ষেত্রে ১.৬ বিলিয়ন এর বেশীও হতে পারে । কিন্তু সরাসরি কার্যকারন সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করার আগ পর্যন্ত সেটা বিশ্বাসীদের সংখ্যাধিক্যের কারনে সত্য হয়ে যায় না । (আবার মিথ্যাও হয়ে যায়না , মোট কথা ঐটার সত্যাসত্য নির্ভর করবে ঐটার নিজের উপর , কতজন বিশ্বাস করলো কি করলোনা তার উপর না )



১৩ : আপিল টু কমন প্র্যাকটিস : (দশজনে করে যাহা তুমিও করিবে তাহে )

এটি সাধারণত বিচার্য কোনো ব্যাক্তি বা সংঘের কর্মকাণ্ডকে ডিফেন্ড করার জন্য ব্যাবহৃত হয়ে থাকে । একটি কাজ, কোনো সমাজে মোটামুটি দৃষ্টিগ্রাহ্য সংখ্যার লোকজন, সাধারণভাবে করে থাকে বলে কাজটিতে খারাপ কিছু নেই বলে দাবী করা হচ্ছে আপিল টু কমন প্র্যাকটিস ফ্যালাসি ।

সমাজে অনেক অনৈতিক কাজই প্রচলিত ছিল, এবং এখনো আছে । শুধুমাত্র প্রচলিত বলে কাজটিকে ত্রুটিহীন বলে দাবী করা যায় না ।

হাদিসের বিভিন্ন অপ্রীতিকর ঘটনার আলোচনায়, এ কুযুক্তিটি প্রায়ই আসে । তখনকার সমাজে এগুলো স্বাভাবিক ব্যাপার ছিল, অতএব এগুলোতে কোনো সমস্যা নাই ।

যুগের প্রচলিত খারাপ কাজগুলাতে যদি কোনো সমস্যা নাই থাকতো তাহলে খারাপ কাজগুলাতো কখনোই খারাপ বলে গন্যও হতো না ।

১৪ : গিল্ট বাই এসোসিয়েশন ( তুই শয়তানের ভাই, তুই চুপ থাক )

ইতিহাসের কোনো কুখ্যাত ব্যক্তি প্রস্তাবনার পক্ষে ছিল, শুধুমাত্র এই কারণে প্রস্তাবনাটি ভুল বলে দাবী করা, হচ্ছে "শয়তানের ভাই " ফ্যালাসি ।

তুমি কইতাছ ঈশ্বরের অস্তিত্তের পক্ষে কোনো প্রমান নাই, হিটলার স্টালিনও একই কথা কইছে অতীতে, তুমি তাদের পর্যায়ে নাইমা গেলা । তুমার সব কথা ভুল। এই জাতীয় ধুনফুন সিরিয়াস আলোচনায় সাধারনত আসে না । কিন্তু তাও বলে রাখি ।

সত্য কারো স্বীকার করা না করার উপর নির্ভর করে না । হিটলার বলেছিল পৃথীবি গোল, সেটা হিটলার অনেক খারাপ লোক বলে মিথ্যা হয়ে যাবে না ।

১৫ : গোল্ডেন মিন ফ্যালাসি (উত্তম নিশ্চিতে চলেন অধমের সাথে, তিনিই মধ্যম চলেন যিনি পশ্চাতে)

প্রস্তাবনা এবং তার বিপরীত প্রস্তাবনার মাঝামাঝি কোনো অবস্থানে সত্য অবস্থান করে বলে, ' ক্ষেত্র নির্বিশেষে' , সমস্ত প্রস্তাবনার জন্য , এরকম মনে করা হচ্ছে গোল্ডেন মিন ফ্যালাসি । বা মধ্যপন্থীর কুযুক্তি বলা যায় । অনেক অবশ্য একে মেরুদন্ডহীনের যুক্তি বলে থাকেন ।

কিন্তু আমার মনে হয়, দ্বান্দিক বস্তুবাদকে ভালোমত না বুঝে জীবনের সব ক্ষেত্রে ঢালাওভাবে প্রয়োগ করতে যারা চান, তারা এই ফ্যালাসিতে আক্রান্ত হন বেশী । সব সময় মেরুদন্ডহীনতার কারনে নয় ।

অর্থনৈতিক ও সামাজিক বিভিন্ন সমস্যার সমাধান প্রস্তাবে দ্বান্দিক বস্তুবাদ যেমন চমৎকার সহায়ক, তেমনি নৈতিক বা প্রাকৃতিক সত্যের অনেক ব্যাপরেই এর প্রয়োগ অযৌক্তিক ও সত্য সত্যই প্রস্তাবকের মেরুদন্ডহীনতার প্রকাশ ।

দাস-প্রথা খারাপ বলে কিছু লোক, আবার দাস-প্রথা ভালো বলে কিছু লোক, অতএব দাস-প্রথার ভালো দিক এবং খারাপ দিক দুটোই আছে । সুতরাং দাস-প্রথা পুরোপুরি বিলুপ্ত করা ঠিক হবে না । শুনেই বুঝা যাচ্ছে কি ধরনের আখাম্বা কুযুক্তি এটি ।

এই কুযুক্তিটি আবার অনেক মডারেট মোছলেমের জীবন সংক্রান্ত ভয়কে মোহ দিয়ে মাখিয়ে রাখার একটি অবলম্বন। নাস্তিকরা খোদার বিপক্ষে এবং মূর্তির পক্ষে, আস্তিকরা খোদার পক্ষে এবং মূর্তির বিপক্ষে, অতএব তারা মধ্যপন্থী, দুজনেরই একটি একটি করে দাবী মেনে নিয়ে তারা খোদার পক্ষে এবং মূর্তিরও পক্ষে ।

একইরকমভাবে তারা সত্যকে সরাসরি ফেইস না করে নিজেদের কুযুক্তির ঘর সাজায়, নাস্তিকদের সব কথা সত্য নয় অতএব ঈশ্বর হয়ত আছেন, আবার মৌলবাদিদের সব কথা সত্য নয় অতএব আল্লার আইন আসলে অত কঠিন নয় । এইভাবে তারা মূলত নিজেদের সুবিধার্থে সত্য মিথ্যার হার্ডকোর যাচাই-বাছাইয়ে না গিয়ে, বালিতে নিজেদের মুখ ডুবিয়ে রাখে ।

১৬ : পয়জনিং দা ওয়েল (খেলুম না, খেলতেও দিমু না)

প্রস্তাবককে তার বক্তব্য উপস্থাপনের সুযোগ না দিয়েই, তার উপর ব্যাক্তিগত আক্রমনও গালিগালাজের মহোৎসব চালিয়ে পুরো প্রক্রিয়াটি ভন্ডুল করে দিয়ে বিজয়ীর বেশে সহযোগীরা একে অপরের ***চাটন প্রনালীকে বলা যায় "খেলতে দিমু না " ফ্যালাসি ।

No comments: